Social Media

Dec 25, 2020

নারীর অধিকার ও সম্মান প্রতিষ্ঠায় হৃদয় রুপান্তর প্রয়োজন

 


“আমার স্বামী যখন আমাকে নির্যাতন করে, তখন আমি মনে করি আমি সেটা আমার কোন ভুলের পরিণাম”—এমন কথা বিবেকবান পুরুষ ও নারীর কাছে ভয়ংকর আঘাতের মত মনে হলেও বাংলাদেশে অনেক বিবাহিত নারীর জীবনে এটাই এক কঠিন বাস্তবতা।

এ বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) একটি জরিপের ফলাফল দেখে দেশ ও বিদেশের অনেকে, বিশেষ করে নারীবাদী ও নারী অধিকার কর্মীগণ বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। বিবিএস-র Multiple Indicator Cluster Survey 2019-র মতে, বাংলাদেশে প্রতি ৪ জন বিবাহিত নারীর মধ্যে ১ জন অথবা শতকরা ২৫ ভাগ মনে করেন বিভিন্ন তুচ্ছ ভুল বা ক্ষুদ্র অধিকার প্রয়োগ করার কারণেও স্বামীর নির্যাতন যৌক্তিক। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে, স্বামীর অনুমুতি ছাড়া বাড়ীর বাইরে যাওয়া, সন্তানের যত্ন সঠিকভাবে করতে না পারা, স্বামীর সাথে তর্ক করা, ভালভাবে রান্না করতে না পারা এবং স্বামীর ইচ্ছামত যৌন সম্পর্ক করতে রাজি না হওয়া।

বিবিএস-র সাম্প্রতিক জরিপ কতটা বাস্তবসম্মত সেটা তর্কসাপেক্ষ, তবে বাংলাদেশ নারীর প্রতি সহিংসতা, বিশেষ করে গৃহ নির্যাতনের ক্ষেত্রে বিশ্বে অন্যতম শীর্ষে তাতে কোন সংশয় নেই। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (UNFPA) অর্থায়নে পরিচালিত বিবিএস-এর একটি জরিপ মতে, বাংলাদেশে শতকরা ৮০ ভাগ বিবাহিত নারী তাদের জীবদ্দশায় স্বামী ও শ্বশুরবাড়ীর লোকদের দ্বারা বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন।

বিশ্ব জুড়েই গৃহ নির্যাতন নারীর প্রতি সহিংসতার মধ্যে অন্যতম। ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের পর গৃহ জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থার মতে, গৃহ নির্যাতন বিশ্ব জুড়ে নারীর প্রতি সহিংসতার অন্যতম কারণ এবং প্রায় ৩৫ শতাংশ নারী তাদের জীবদ্দশায় নানা প্রকার গৃহ নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন।

দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার মত রক্ষণশীল ও পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীর প্রতি সহিংসতা একটি নিত্য নৈমিত্তিক ও বিয়োগান্তক বাস্তবতা।