![]() |
| John J. Clancy (Photo: https://hotsewai.com.hk) |
জানুয়ারি ৬, ২০২১। হংকংয়ের স্বনামধন্য আইনগত সহায়তা প্রতিষ্ঠান হো সে ওয়াই এন্ড পার্টনার্সের সামনে একদল সাংবাদিক অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান। তাদের সামনে দিয়েই পুলিশ প্রখ্যাত আমেরিকান আইনজীবী জন জে. ক্ল্যানসিকে গ্রেফতার করে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে গেল।
হংকংয়ের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রবাদপুরুষ ৭৯ বছর বয়সী ক্ল্যানসি যখন ক্রাচে ভর করে পুলিশ প্রহরায় এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন অপেক্ষমান সাংবাদিকদের মধ্য থেকে একজন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে জানতে চাইলেন জনগণের উদ্দেশ্যে তার কোন কিছু বলার আছে কিনা।
কিছুটা নিচু গলায় কিন্তু স্পষ্টস্বরে ক্ল্যানসি বললেন, “হংকংয়ের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে আমাদের সবাইকে কাজ করে যেতে হবে।”
সারা বিশ্বের মানবাধিকার কর্মী ও গনতন্ত্রপন্থীগণ ৬ জানুয়ারিকে হংকংয়ের গণতান্ত্রিক ইতিহাসের “অন্ধকারতম দিন” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কেননা সেদিন ক্ল্যানসিসহ ৫৫ জন গণতন্ত্রপন্থী রাজনীতিবিদ ও কর্মীকে ক্যারি ল্যামের নেতৃত্বাধীন হংকং সরকার গ্রেফতার করে। এদেরকে সকলকে বেইজিংয়ের কমিউনিস্ট সরকারের মদদে গত বছরের জুনে প্রণীত কুখ্যাত জাতীয় নিরাপত্তা আইন ভঙ্গের অভিযোগে আটক করা হয়। চীনের অন্তর্ভুক্ত এ স্বায়ত্বশাসিত নগরীতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপর এত বৃহৎ পরিসরের দমন-পীড়ন এক নজিরবিহীন ঘটনা।
জন ক্ল্যানসি এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের চেয়ারম্যান এবং গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক সংগঠন পাওয়ার ফর ডেমোক্রেসির কোষাধ্যক্ষ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি “সরকারকে অস্থিতিশীল করা ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল” করার এক ষড়যন্ত্রের সঙ্গে লিপ্ত ছিলেন।
পাওয়ার ফর ডেমোক্রেসি সংগঠনটি হংকংয়ের স্থগিত নির্বাচনে বিরোধীদলীয় প্রার্থী মনোনয়নের লক্ষ্যে ২০২০ সালের জুলাই মাসে একটি অনানুষ্ঠানিক, স্বাধীন ভোটের আয়োজন করেছিল।
জন ক্ল্যানসি বেইজংপন্থী ক্যারি ল্যামের নেতৃত্বাধীন হংকং সরকারের আমলে গ্রেফতার হওয়া প্রথম বিদেশী নাগরিক। আটক হওয়ার একদিন পর তিনি জামিনে মুক্তি লাভ করেন।
এই গ্রেফতার ও আটক হওয়া ক্ল্যানসির জীবনে এক অভুতপূর্ব ঘটনা। ক্যাথলিক ধর্মযাজক থেকে মানবাধিকার আইনজীবী বনে যাওয়া ক্ল্যানসি তার জীবনের পাঁচ দশকেরও বেশি সময় এই সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশে কাটিয়ে দিয়েছেন। তাই তিনি নিজেকে হংকংয়ের বাসিন্দা হিসেবে পরিচয় দিতে বেশি পছন্দ করেন।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্ল্যানসি বলেন যে তিনি পুলিশের হাতে আটক হওয়ার ঘটনায় “ভয় পান নি, কিন্তু বিস্মিত হয়েছেন।”
তিনি বলেন, “আপনি যখন মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও কল্যাণ কামনায় অনুপ্রাণিত হয়ে কোন কাজ করেন, তখন আপনার ভয় পাবার কিছু নেই। আমি ভুল কোন কিছু করি নি। আমি সব সময় মনে করে এসেছি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য কাজ করা অতি উত্তম। মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কাঠামো যা মানুষের জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে, তার বিষয়ে যারা উদ্বিগ্ন তাদের প্রতি ভালোবাসা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি কাজ করে গেছি।”
ক্ল্যানসির অকুতোভয় বাণী যেন তার সুদীর্ঘ, বর্ণাঢ্য ও কর্মময় জীবনের সংক্ষিপ্ত প্রতিবিম্ব। তিনি তার প্রায় গোটা জীবন নানা শ্রেণীর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, বিশেষ করে হংকং ও অন্যান্য স্থানে যারা সুবিধাবঞ্চিত এবং দু:খ-কষ্ট জর্জরিত, তাদের তাদের সেবায় কাটিয়ে দিয়েছেন।


,_right,_the_Military_Sealift_Command_fleet_replenishment_oiler_U.jpg)