Nov 30, 2017

পোপ ফ্রান্সিসের উদারনীতি ও সংস্কার

পোপ ফ্রান্সিস
পোপ ফ্রান্সিস এমন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব, যিনি এমন এক উদারনৈতিক বিশ্বচেতনার অনুসারী, যা পৃথিবীর সব মানুষকে যুক্ত করে এবং কাউকেই বাদ দেয় না। ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের ১২০ কোটি ক্যাথলিক খ্রিষ্টবিশ্বাসীর সর্বোচ্চ ধর্মগুরু নিজেকে বহুমাত্রিক পরিবর্তনের অগ্রদূত হিসেবে কাজ করে আসছেন। তিনি দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ তথা দক্ষিণ গোলার্ধের প্রথম পোপ এবং প্রায় ১ হাজার ৩০০ বছরের মধ্যে প্রথম অ-ইউরোপীয় পোপ।

পোপ নির্বাচিত হওয়ার পরপরই তিনি যখন রোমের সাধু পিতরের মহামন্দিরের বিখ্যাত ব্যালকনিতে আবির্ভূত হন, তখন দেখা গেল তিনি খুব সাধারণ সাদা পোশাক পরিহিত এবং গলায় কাঠের তৈরি একটি ক্রুশ। তিনি ঐতিহ্যবাহী ও জমকালো লাল রঙের ‘পোপীয় মোজেত্তা’ পরিহার করলেন। বিগত পাঁচ বছরের পোপীয় কার্যকালে মণ্ডলীর নীতিগত ও মৌলিক ধর্মতত্ত্বের কোনো বড় পরিবর্তন না করেই বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি কথায় ও কাজে ক্যাথলিকমণ্ডলীর কট্টর অবস্থানকে লঘু করার প্রয়াস নিয়েছেন।

পোপ ফ্রান্সিস মঙ্গলসমাচারের বর্ণিত যিশুর শিক্ষা অনুসারে ক্যাথলিক মণ্ডলীর শক্তি-সামর্থ্যকে ব্যবহারের দিকে অধিকতর মনোযোগী। তিনি তেমন বিশপদের চান না, যারা ‘রাজপুত্র’ (Princes) হতে চায় কিন্তু ‘একনায়কসুলভ’ মনোভাব পরিহার করে ‘পালক’ হিসেবে জনগণকে নেতৃত্ব দিতে চায় না।

একটি ইতালীয় সংবাদপত্রের বিশ্লেষণ অনুসারে পোপ তাঁর উপদেশবাণী ও আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে যে শব্দটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন, তা হলো ‘আনন্দ (Joy)’। পোপ বিশ্বাসের জীবনকে চিত্তাকর্ষক ও আনন্দময় করে তোলার প্রয়াসে যে পরিবর্তনের সূচনা করেছেন, তা কোনো কোনো ধর্মীয় নেতার রক্ষণশীল ও আক্রমণাত্মক শিক্ষার চেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়, মানবিক ও সহনশীল।
২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে পোপ ফ্রান্সিস এক পালকীয় শ্বেতপত্র (Apostolic Exhortation) প্রকাশ করেন, যার শিরোনাম হলো ‘ইভানজেলি গাউদিউম’ বা ‘মঙ্গলসমাচারের আনন্দ’। এই পত্রটি তাঁর পোপীয় শাসন আমলের প্রায় সব শিক্ষা ও কর্মোদ্যোগের প্রাণকেন্দ্র। এই পত্রের দ্বারা তিনি পুঁজিবাদের গড্ডালিকাপ্রবাহে ভেসে চলা চরম ও বল্গাহীন বিশ্বায়নের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি ভোগবাদী সংস্কৃতি, ব্যবসায়িক লোলুপতা ও ধনীদের ধনী করে এবং দরিদ্রদের দরিদ্রতর করে এরূপ অর্থনীতিকে আঘাত করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সেই অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে, যা বহু মানুষকে বঞ্চিত করে এবং সামাজিক অসমতাকে উসকে দেয়। এমন অর্থনীতি মানুষকে মেরে ফেলে। এ কেমন বিশ্বব্যবস্থা আমরা গড়ে তুলেছি, যেখানে একজন বয়স্ক, দরিদ্র ও বাস্তুহীন মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মারা গেলেও তা কোনো সংবাদমাধ্যমে খবর হিসেবে গণ্য হয় না, কিন্তু শেয়ারবাজারে দুই সূচক পতন হলেই তা সংবাদের শিরোনাম হয়?’ পোপ ফ্রান্সিস তথাকথিত কট্টরপন্থী মাণ্ডলিক নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, তাঁরা যেন সেবাকাজের কথা ভুলে না যান। তিনি তাঁদের ক্ষমতা ও উচ্চপদের পিচ্ছিল সিঁড়ি বেয়ে ওঠার ইঁদুর দৌড়ে মত্ত না হতে পরামর্শ দেন।
পোপ ফ্রান্সিস পরিবেশদূষণকে ‘পাপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং বিশ্ববাসীর প্রতি আবেদন জানান, যেন তারা ‘ফেলে দেওয়ার সংস্কৃতি’, ভোগবাদ ও ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন উন্নয়ন’ পরিত্যাগ করে। তিনি দৃঢ়ভাবে নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে বিশ্বনেতাদের জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষর করার প্রতি আহ্বান জানান এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধে ‘দ্রুত, সমন্বিত ও একীভূত’ উদ্যোগ নিতে জোরালো আবেদন জানান।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফ্রান্সিস সাময়িক কালের জন্য এক বিশেষ ‘দয়ার জানালা’ উন্মুক্ত করেন, যাতে যেসব নারী গর্ভপাত ঘটিয়েছেন, তাঁরা যাজকের কাছে গিয়ে পাপ স্বীকার করেন এবং পুনরায় মণ্ডলীতে ফিরে আসেন। তাঁর আরও অনেক প্রতীকী উদ্যোগের মতো এটিও বিশেষ প্রতীকী তাত্পর্য বহন করে। কারণ, খ্রিষ্টমণ্ডলী গর্ভপাতকে হত্যা ও ক্ষমার অযোগ্য পাপ হিসেবে বিবেচনা করে। পোপ গর্ভপাত বিষয়ে মণ্ডলীর এই অবস্থানের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন করেননি, কিন্তু দয়া ও করুণার মাধ্যমে এক নতুন বার্তা দিলেন।
 ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে পোপ ফ্রান্সিস পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশপদের পালকীয় বিশেষ সভা আহ্বান করেন, যার মূল আলোচ্য বিষয় ছিল মণ্ডলীতে বিবাহ ও পরিবার জীবন। এই সভার পরপরই পোপ ক্যাথলিক মণ্ডলীর বিবাহ বাতিলকরণ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতার অবসানে গোটা প্রক্রিয়াকে সহজ-সরল ও সংক্ষিপ্ত করেন।
বিভিন্ন সময়ে পোপ ইসলাম ধর্মের প্রতি সহনশীল মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তিনি সন্ত্রাসবাদ ও সহিংসতার সঙ্গে ইসলামকে মিলিয়ে ফেলার ভ্রান্ত প্রবণতাকে পরিহার করতে আহ্বান জানিয়েছেন এবং পশ্চিমা বিশ্বে ক্রমবর্ধমান ‘ইসলামভীতির’ (Islamophobia) সমালোচনা করেছেন। বরং তিনি মুসলিমদের সমর্থনে পশ্চিমা বিশ্বেও নৈতিক অবক্ষয়ের সমালোচনা করেন।
সুতরাং এ কথা বলাই বাহুল্য যে পোপ ফ্রান্সিস একজন মহান বিপ্লবী, যিনি তাঁর কথা ও কাজের দ্বারা অভূতপূর্ব বিপ্লব ঘটিয়েছেন বিগত পাঁচ বছরে। তঁার উদারনীতি ও সংস্কার কর্মসূচি বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। আর তাই পোপ ফ্রান্সিসের শাসনকাল খ্রিষ্টমণ্ডলী ও বিশ্বের ইতিহাসের এক অসামান্য ও চিরস্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে।


রক রোনাল্ড রোজারিও: লেখক এবং বাংলাদেশ ব্যুরোপ্রধান, ইউনিয়ন অব ক্যাথলিক এশিয়ান নিউজ।

Nov 29, 2017

What can Pope Francis and Bangladesh achieve from upcoming trip?


Pope Francis’s apostolic journey to Bangladesh (Nov. 30-Dec. 2) is highly expected to be welcoming, joyful and peaceful, unlike his somewhat prickly trip to ethnically and religiously divided Myanmar days before.

Francis will be the third pontiff to visit the Muslim-majority nation. 

দক্ষিণ এশিয়ায় ভোটের রাজনীতি এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়

Bangladeshi Christians who account for less than half percent of some 165 million inhabitants in the country pray during an Easter Mass in D...