আর্মেনিয়ান এপোস্টলিক চার্চ অব হলি রেজুরেকশন (Armenian Church of Holy Resurrection) Courtesy: Armenian Church of Bangladesh |
পুরান ঢাকার আরমানিটোলার আর্মেনিয়ান স্ট্রিটে অগুনতি সুউচ্চ আবাসিক ভবনের মাঝখানে নীরবে, কিন্তু গর্বভরে দাঁড়িয়ে একটি শ্বেতকায় দ্বিতল গির্জা।
লাগোয়া সমাধিক্ষেত্রে অনেকগুলো কবর যেগুলো আর্মেনীয়দের স্মৃতি বয়ে চলেছে যারা আজকের বাংলাদেশের এ রাজধানী শহরে একদা বসত করেছে ও প্রাণত্যাগ করেছে।
১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত আর্মেনিয়ান এপোস্টলিক চার্চ অব হলি রেজুরেকশন (Armenian Church of Holy Resurrection) শুধুমাত্র একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাই নয়, এটি ঢাকার একদার সমৃদ্ধশালী আর্মেনীয় সম্প্রদায়ের সাক্ষ্যদান করে চলেছে, যারা অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতকে এ মহানগরীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনকে সুসমৃদ্ধ করেছে।
আর্মেনীয় চার্চের অদূরে, ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত হলিক্রস ক্যাথলিক চার্চ, যেখানে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লোক বসবাস করে।
আর্মেনিয়ান স্ট্রীট ও আরমানিটোলা কালের গর্ভে মিশে যাওয়া এক গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষী। কিন্তু এ ইতিহাস ও ঐতিহ্য হয়তোবা বিস্তৃতির অতলে হারিয়ে যেতো যদি না এক মহানুভব আর্মেনীয় তা ভালোবেসে রক্ষা করতেন। তিনি মাইকেল যোসেফ মার্টিন, ঢাকায় বসবাসকারী সর্বশেষ আর্মেনীয়।
তিন দশকের বেশি সময় ধরে মার্টিন ছিলেন এ চার্চের সর্বশেষ আবাসিক তত্ত্বাবধায়ক (Warden)। মূলত তার একক প্রচেষ্টার ফলেই চার্চটি আক্ষরিক অর্থে এক ভগ্নস্তুপ থেকে পুনর্জন্ম লাভ করে।
মার্টিনের তিন মেয়ে - এলিনর, ক্রিস্টিন ও শেরিল - বেশ অনেক আগে কানাডায় অভিবাসী হিসেবে থিতু হয়েছে। কিন্তু মার্টিন ও তার স্ত্রী ভেরোনিকা বাংলাদেশে রয়ে যান চার্চের দেখাশোনা করতে।
ভেরোনিকা ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে মারা যান এবং তার অন্তিম শয্যা হয় এ চার্চেরই সমাধিক্ষেত্রে। বার্ধক্যজনিত স্বাস্থ্যহানির কারণে অনেকটা বাধ্য হয়ে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে মার্টিন কানাডা চলে যান। তবে বাংলাদেশ ত্যাগের পূর্বে তিনি এ চার্চের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব (Wardenship) হস্তান্তর করেন যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলস নিবাসী আর্মেনীয় ব্যবসায়ী আর্মেন আরসলানিয়ানের হাতে।
এ বছরের ১০ এপ্রিল মার্টিন কানাডাতে তার মেয়ে ও নাতি-নাতনীদের সান্নিধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তার দেহাবসানের মাধ্যমে ঢাকার আর্মেনীয় ঐহিত্য বাস্তবিক অর্থেই ইতিহাসের অংশ হয়ে গেল।
ঢাকার আর্মেনীয় চার্চ ও ঐতিহ্য রক্ষায় মার্টিনের অসামান্য অবদানকে স্মরণ করে আর্মেন আরসলানিয়ান তার প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
"তার বহু ব্যক্তিগত ত্যাগস্বীকার ও চার্চের প্রতি সম্পূর্ণ ভক্তি ব্যতিত এ চার্চ ও ঢাকার আর্মেনীয় ঐতিহ্য বহুলাংশে টিকে থাকতে পারত না," আর্মেন বলেন। বর্তমানে ৬০ বছর বয়সী আর্মেনের জন্ম আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে।
তিনি আরো বলেন, "তিনি ও তার পরিবারের ব্যাপক ও অসাধারণ প্রচেষ্টার ফলে আমাদের এ অনিন্দ্যসুন্দর চার্চটি রক্ষা পেয়েছে। এ অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।"
বিশ্বজুড়ে হাজারো অভিবাসী আর্মেনীয়র মতো আর্মেনের বাবা ও মা ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের দিকে তৎকালীন অটোমান সাম্রাজ্যে সংঘটিত ভয়াল " আর্মেনীয় গণহত্যা" থেকে প্রাণ বাঁচাতে আর্জেন্টিনাতে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হন।
আর্মেন প্রতি বছর কয়েকবার বাংলাদেশে আসেন চার্চের তদারকি করার জন্য।
মাইকেল যোসেফ মার্টিন (Michael Joseph Martin) Courtesy: Armenian Church of Bangladesh |