গোড়ার কথা
ছোটবেলায় আমি বেশ লাজুক ও নিরীহ স্বভাবের ছিলাম সেটা হোক বাড়িতে, স্কুল বা বন্ধুমহলে। মনে পরে বাবা যদি কোনদিন কারো কাছে পাওনা টাকা ফেরত আনতে পাঠাতেন, তা চাইতে গেলেও আমার লজ্জা লাগতো। ক্লাস ফোরে পড়ার সময় আমাদের পবিত্র যীশু হৃদয় ধর্মপল্লীর (রাঙ্গামাটিয়া) সেবক দলে ভর্তি হই এবং ঐ বছরই কোন একদিন মিশায় সেবক হওয়ার পালা পরে। সেদিন ভয়ের চেয়ে লজ্জাই বেশি পেয়েছিলাম, আর তাই সেবকের কাজে ভুল করে ফেলেছিলাম। সাথে আমাদের বাড়ির এক বড় ভাই ছিল তাই কোন সমস্যা ছাড়াই পার পেয়ে যাই।
পরবর্তী জীবনে এই লাজুক ও নিরীহ ভাবটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি, এবং এর পেছনে বড় অবদান আমার দীর্ঘ নয় বছরের (১৯৯৯-২০০৭) সেমিনারি জীবন। ক্লাস নাইন থেকে বি.এ. চূড়ান্ত বর্ষ পর্যন্ত ঢাকার তিনটি ধর্মপ্রদেশীয় সেমিনারিতে নানা অঞ্চলের সহপাঠী, বড় ও ছোট ভাইদের সঙ্গে কাটিয়েছি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও জেলার নানা মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে—বাঙ্গালি ও আদিবাসী। একাদিক্রমে বাংলাদেশের বাকি সাত ধর্মপ্রদেশের সাথে যোগসূত্র স্থাপনে আমার সেমিনারি জীবন একটি চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করেছে।
তবে, এ সত্ত্বেও, উত্তরবঙ্গ তথা রাজশাহী অঞ্চলে আমার ভাল কোন সংযোগ হয়নি। এর প্রধান কারণ সেমিনারি জীবনে আমাদের ব্যাচে এই এলাকার কোন সহপাঠী ছিল না। অন্যান্য ব্যাচে বেশ কয়েকজন বড় ও ছোট ভাই ছিল, বাঙ্গালি ও আদিবাসী। বাঙ্গালি যারা তাদের মুখের ভাষা ছিল হুবুহু আমাদের ভাওয়াল অঞ্চলের চলিত কথ্য ভাষা। তাদের কথা শুনে প্রথমে অবাক হয়েছিলাম, যদিও জানতাম ঐ অঞ্চলের তিনটি বড় ধর্মপল্লীর (মথুরাপুর, বোর্ণী ও বনপাড়া) প্রায় সব বাঙ্গালি খ্রিস্টানই আমাদের ভাওয়াল অঞ্চলের অভিবাসী ও তাদের বংশধর। আমার বাবার দুই মামা ও এক মাসি যথাক্রমে পাবনার চাটমোহর ও নাটোরের শ্রীখণ্ডীতে কয়েক দশক পূর্ব থেকে বসবাস করে আসছেন। ছোটবেলায় দেখতাম বাবার মামাতো ও মাসতুতো ভাই-বোনেরা আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসতেন। তবে সময়ের পরিক্রমায় যাতায়াত এবং সম্পর্ক উভয়েই ভাঁটা পড়ে যায়।