বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বিজয় দিবসের প্রাক্কালে ১৫ ডিসেম্বর প্রদীপ প্রজ্জলন (ছবিঃ এএফপি) |
সারা বিশ্বের ন্যায় করোনা মহামারীতে বাংলাদেশের জনজীবন বিপর্যস্ত হলেও ২০২১ সালটি ছিল জাতির জন্য একটি উৎসবমুখর ও তাৎপর্য্যপূর্ণ বছর। সে বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দেশজুড়ে পালিত ‘মুজিব বর্ষ’-র সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচী ও অনুষ্ঠানমালার বর্ণাঢ্য সমাপণী অনুষ্ঠিত হয়। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবের জেষ্ঠ্যা কন্যা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই বছরের শেষদিকে ডিসেম্বর মাসে জাতি পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছে।
শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গোটা বছর জুড়ে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যে সকল কর্মসূচী পালন করা হয়েছে তার চূড়ান্ত পর্যায়ের অনুষ্ঠানমালা মঞ্চস্থ হয়েছে ১৭-২৬ মার্চ। দেশের গণমান্য ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও ভারত, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, নেপাল ও ভুটানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রধান ও প্রতিনিধিগণ একগুচ্ছ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আয়োজনে শামিল হয়েছেন।
মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের জনগণের তরফ থেকে এরূপ উচ্চমার্গীয় শ্রদ্ধা ও সম্মান পাওয়ার শ্রেষ্ঠ দাবিদার। কারণ তার সুযোগ্য ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের গুণেই বাঙালি জাতির হাজার বছরের স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তব রূপ লাভ করেছে। আক্ষরিক অর্থেই মুজিব ছিলেন এক মহান ও দূরদর্শী নেতা, যিনি তার গোটা জীবন জনগণের সুখ ও দু:খে পাশে থেকে অতিবাহিত করেছেন এবং জনগণের অধিকার আদায়ের জন্যে বারংবার অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। এ কারণে তার প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের অধিকাংশ সময়ই জেলখানায় কাটাতে হয়েছে।
স্বাধীনতার পর চরমভাবে যুদ্ধবিদ্ধস্ত একটি রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে তাকে সর্বগ্রাসী দারিদ্র ও ক্ষুধাসহ এবং অসংখ্য সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে। কিন্তু জনগণ ও দেশের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল সর্বদা অতুলনীয় ও অতলস্পর্শী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে কুচক্রীদের ষড়যন্ত্রে সপরিবারে তার বর্বরোচিত হত্যাকান্ড বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কালো এবং মর্মান্তিক অধ্যায়।
যেভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন জাতিকে উজ্জীবিত করেছে, তেমনিভাবে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতেও দেশের জনগণ ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ পর্যন্ত এক সপ্তাহব্যাপী উদ্বেলিত ছিল।
৫০ বছর আগের এই দিনে দেশ ও বিদেশে কোটি কোটি বাঙালি আনন্দ ও স্বস্তির অশ্রুজল বিসর্জন করেছিল। কেননা সেদিন বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর নিকট হানাদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নি:শর্ত আত্মসমর্পণের ফলে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়।