স্বাধীন বাংলাদেশে আজও অধিকাংশ বাঙালি প্রকৃত মুক্তি ও স্বাধীনতার স্বাদ পায় নি। (Photo: Rock Ronald Rozario) |
১৯৭১। বাঙালি জাতি এক স্বর্ণালু স্বপ্নে বিভোর হয়েছিল–পরাধীনতার বন্ধন থেকে মুক্ত হবার নেশায় । এ মুক্তিপাগল জাতিকে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও বঞ্চনার অবসানে একটি শোষণহীন, সাম্যবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক, দুর্নীতিমুক্ত, ক্ষুধা-দারিদ্রহীন ও সর্বজনের মঙ্গল ও উন্নয়নে ব্রতী দেশ ও জাতি গঠনের সে স্বপ্নে সওয়ার করেছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সুখ-শান্তি-সাম্যের জয়োগান গেয়ে নয় মাসব্যাপী যুদ্ধে কত লাখো তাজা প্রাণ বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে, কত না নারী সম্ভ্রম খুঁইয়েছে, কত কোটি মানুষ ভিটে-মাটি-সম্পদ হারিয়ে সর্বশান্ত হয়েছে। ১৯৪৭ সালের তথাকথিত ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদী উন্মাদনায় ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের যে ঐতিহাসিক ভ্রান্তিবিলাস, তার প্রায়শ্চিত্ত বলির নামান্তর সে সংগ্রাম । আর স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য এই যে বিপুল আত্মদান, বিশ্ব ইতিহাসেই তা বিরল।
স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে এসে আজ ভাবার বিষয় যে স্বপ্ন ও আশা নিয়ে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে অসামান্য আত্মত্যাগ করেছে, তার যথাযথ মূল্যায়ন কী পরবর্তী প্রজন্ম করতে পেরেছে? আমরা কী সত্যিকার অর্থে স্বাধীন হতে পেরেছি?
আপাত দৃষ্টিতে মনে হবে বিগত দশকগুলোতে আমাদের এদেশ আর্থ-সামাজিক মানদন্ডে অসামান্য উন্নতি করেছে। যেমন, বাংলাদেশ আজ বহুলাংশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বাড়লেও উন্নত চাষাবাদ ও কৃষি পদ্ধতি বদৌলতে খাদ্য উৎপাদনও বাড়ানো গেছে, যদিও বিপুল জনসংখ্যার চাপে আবাদী জমরি পরিমাণ ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প বর্তমানে চীনের পর বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান দখল করে আছে, যার বার্ষিক রপ্তানি আয় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো বার্ষিক রেমিটেন্সের পরিমাণ ১৫ বিলিয়ন ডলারের মতো, যা বিশ্বে অষ্টম। বিগত দুই দশকে মাতৃ মৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার চার ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে । গড় আয়ুস্কাল বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০-এ। এই সময়ে বার্ষিক দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৬ শতাংশ হারে বেড়েছে। আজ প্রায় ৯৮ ভাগ শিশু প্রাইমারি স্কুলে যায় ।
এর সবই বাংলাদেশের সাফল্যের মুকুটে মুক্তোর ন্যায় । কিন্তু এটাই গোটা চিত্র নয়। আলোকিত বাংলাদেশের অপর পিঠে নিকষ কালো, ভয়ংকর অন্ধকার ।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও বঞ্চনা থেকে আমরা মুক্ত, স্বাধীন হতে চেয়েছিলাম । কিন্তু আজ সামাজিক-রাজনৈতিক নেতা, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, তথাকথিত উন্নয়নকামী ব্যক্তি, লাভজনক-অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের কাছে মানুষ প্রতিনিয়ত জিম্মি হয়ে আছে। সবাই নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত। যারা যত বেশি উন্নয়ন ও সেবার বুলি আওড়ায় তারা নিজের কোলেই ঝোল বেশি টানে। ধনীলোক আরো ধনী হয়, দরিদ্র হয় দরিদ্রতর। কতিপয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে সম্পদ কুক্ষিগত হয়, আর তাই ধনী-গরীবের আয় বৈষম্য আকাশ-পাতাল ।
এদেশে গার্মেন্টস শ্রমিকের মাসিক মজুরির চেয়ে মালিকের গাড়ির তেলের খরচ কয়েকগুণ বেশি, অথচ এ পাওনাটাও তাঁরা ঠিকমতো পায় না । খরচ কমানোর নাম করে কারখানার কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তা উপেক্ষিত থাকে, আর তাই হাজারো শ্রমিকের জীবন রানা প্লাজার ধ্বংসস্তুপে চাপা পড়ে যায়। হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পরও কৃষক তার ফসলের ন্যায্য দাম পায় না। প্রবাসী শ্রমিক মানবেতর জীবন যাপন করে, নির্যাতিত হয় ও অকালে মরে যায়।
আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী নেত্রী, স্পীকার নারী হলেও নারী তার সম্মান, অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই করে চলেছে। ঘরে-বাইরে নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি, ইভ টিজিং বন্ধ হয় নি। বাল্য বিবাহ আজো বহু কন্যা শিশুর জীবনে অভিশাপ ডেকে আনছে; উপরন্তু সরকার তা গোড়া থেকে নির্মূল না করে সম্প্রতি “বিশেষ বিধান” যুক্ত করে বাল্য বিবাহকে জায়েজ করার আইন পাশ করেছে।
ইসলামি রাষ্ট্র হতে চায় নি বলে বাঙালি পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। অথচ সে দেশের সংবিধানে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ নীতির পাশাপাশি ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বিদ্যমান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধ্বজাধারী কোন রাজনৈতিক দল তা পরিবর্তন করার সাহস রাখে না। ষাট বা সত্তরের দশকের চেয়েও মানুষ চিন্তা-ভাবনায় অনেক বেশি মৌলবাদী ও অসহনশীল । সংখ্যালঘু নির্যাতন আজ ডাল-ভাত, যার জ্বলন্ত সাক্ষী রামুর বৌদ্ধ, নাসিরনগরের হিন্দু ও গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালরা। এসবের বিচারের আশা আজ সুদূরপরাহত।
আজ দেশে ইসলামি মৌলবাদীরা জেঁকে বসেছে। তারা প্রগতিশীল লেখক, প্রকাশক,শিক্ষক, উদারপন্থী মুসলমান, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু কাউকেই রেহাই দিচ্ছে না । সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দল এক অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাতে ব্যস্ত । আইন-শৃংখলা বাহিনী পিঠ বাঁচাতে কিছু ধর-পাকড় ও হত্যা করলেও আসল কাজ- মৌলবাদের আদর্শিক, সামাজিক ও আর্থিক ভিত্তিমূলে আঘাত হানছে না । জঙ্গিদের হামলায় নিহত ও আহতরা সুবিচার পাচ্ছে না। মুক্ত চিন্তার বাহক লেখক-প্রকাশকদের নিরাপত্তা নেই, বরং উল্টো সরকার মৌলবাদীদের চাপে নতি স্বীকার করে তাদেরকে ভৎর্সনা করছে। জীবন বাঁচাতে আজ তাই তাদের নিজ দেশ ছেড়ে ইউরোপ- আমেরিকা পাড়ি জমাতে হচ্ছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষার্ধে পাক বাহিনী ও রাজাকারদের ষড়যন্ত্রমূলক গুপ্তহত্যার মতো আজো মানুষ ক্রসফায়ারে মারা পড়ে, কিংবা গুম হয়ে যায়।
আপাত দৃষ্টিতে মনে হবে বিগত দশকগুলোতে আমাদের এদেশ আর্থ-সামাজিক মানদন্ডে অসামান্য উন্নতি করেছে। যেমন, বাংলাদেশ আজ বহুলাংশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বাড়লেও উন্নত চাষাবাদ ও কৃষি পদ্ধতি বদৌলতে খাদ্য উৎপাদনও বাড়ানো গেছে, যদিও বিপুল জনসংখ্যার চাপে আবাদী জমরি পরিমাণ ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প বর্তমানে চীনের পর বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান দখল করে আছে, যার বার্ষিক রপ্তানি আয় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো বার্ষিক রেমিটেন্সের পরিমাণ ১৫ বিলিয়ন ডলারের মতো, যা বিশ্বে অষ্টম। বিগত দুই দশকে মাতৃ মৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার চার ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে । গড় আয়ুস্কাল বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০-এ। এই সময়ে বার্ষিক দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৬ শতাংশ হারে বেড়েছে। আজ প্রায় ৯৮ ভাগ শিশু প্রাইমারি স্কুলে যায় ।
এর সবই বাংলাদেশের সাফল্যের মুকুটে মুক্তোর ন্যায় । কিন্তু এটাই গোটা চিত্র নয়। আলোকিত বাংলাদেশের অপর পিঠে নিকষ কালো, ভয়ংকর অন্ধকার ।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও বঞ্চনা থেকে আমরা মুক্ত, স্বাধীন হতে চেয়েছিলাম । কিন্তু আজ সামাজিক-রাজনৈতিক নেতা, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, তথাকথিত উন্নয়নকামী ব্যক্তি, লাভজনক-অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের কাছে মানুষ প্রতিনিয়ত জিম্মি হয়ে আছে। সবাই নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত। যারা যত বেশি উন্নয়ন ও সেবার বুলি আওড়ায় তারা নিজের কোলেই ঝোল বেশি টানে। ধনীলোক আরো ধনী হয়, দরিদ্র হয় দরিদ্রতর। কতিপয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে সম্পদ কুক্ষিগত হয়, আর তাই ধনী-গরীবের আয় বৈষম্য আকাশ-পাতাল ।
এদেশে গার্মেন্টস শ্রমিকের মাসিক মজুরির চেয়ে মালিকের গাড়ির তেলের খরচ কয়েকগুণ বেশি, অথচ এ পাওনাটাও তাঁরা ঠিকমতো পায় না । খরচ কমানোর নাম করে কারখানার কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তা উপেক্ষিত থাকে, আর তাই হাজারো শ্রমিকের জীবন রানা প্লাজার ধ্বংসস্তুপে চাপা পড়ে যায়। হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পরও কৃষক তার ফসলের ন্যায্য দাম পায় না। প্রবাসী শ্রমিক মানবেতর জীবন যাপন করে, নির্যাতিত হয় ও অকালে মরে যায়।
আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী নেত্রী, স্পীকার নারী হলেও নারী তার সম্মান, অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই করে চলেছে। ঘরে-বাইরে নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি, ইভ টিজিং বন্ধ হয় নি। বাল্য বিবাহ আজো বহু কন্যা শিশুর জীবনে অভিশাপ ডেকে আনছে; উপরন্তু সরকার তা গোড়া থেকে নির্মূল না করে সম্প্রতি “বিশেষ বিধান” যুক্ত করে বাল্য বিবাহকে জায়েজ করার আইন পাশ করেছে।
ইসলামি রাষ্ট্র হতে চায় নি বলে বাঙালি পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। অথচ সে দেশের সংবিধানে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ নীতির পাশাপাশি ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বিদ্যমান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধ্বজাধারী কোন রাজনৈতিক দল তা পরিবর্তন করার সাহস রাখে না। ষাট বা সত্তরের দশকের চেয়েও মানুষ চিন্তা-ভাবনায় অনেক বেশি মৌলবাদী ও অসহনশীল । সংখ্যালঘু নির্যাতন আজ ডাল-ভাত, যার জ্বলন্ত সাক্ষী রামুর বৌদ্ধ, নাসিরনগরের হিন্দু ও গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালরা। এসবের বিচারের আশা আজ সুদূরপরাহত।
আজ দেশে ইসলামি মৌলবাদীরা জেঁকে বসেছে। তারা প্রগতিশীল লেখক, প্রকাশক,শিক্ষক, উদারপন্থী মুসলমান, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু কাউকেই রেহাই দিচ্ছে না । সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দল এক অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাতে ব্যস্ত । আইন-শৃংখলা বাহিনী পিঠ বাঁচাতে কিছু ধর-পাকড় ও হত্যা করলেও আসল কাজ- মৌলবাদের আদর্শিক, সামাজিক ও আর্থিক ভিত্তিমূলে আঘাত হানছে না । জঙ্গিদের হামলায় নিহত ও আহতরা সুবিচার পাচ্ছে না। মুক্ত চিন্তার বাহক লেখক-প্রকাশকদের নিরাপত্তা নেই, বরং উল্টো সরকার মৌলবাদীদের চাপে নতি স্বীকার করে তাদেরকে ভৎর্সনা করছে। জীবন বাঁচাতে আজ তাই তাদের নিজ দেশ ছেড়ে ইউরোপ- আমেরিকা পাড়ি জমাতে হচ্ছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষার্ধে পাক বাহিনী ও রাজাকারদের ষড়যন্ত্রমূলক গুপ্তহত্যার মতো আজো মানুষ ক্রসফায়ারে মারা পড়ে, কিংবা গুম হয়ে যায়।
বিশ্বসভায় দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন ও এখনো শীর্ষস্থানের কাছাকাছি রযেছে বাংলাদেশ। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ঘুষ দেওয়া-নেওয়া যেন সিস্টেমেরই অংশ, ঘুষ পাওয়া অনেকটা অধিকারের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাদ্যে ভেজাল মানুষকে মারাত্নক হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আজো দেশের তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে, চারভাগের এক ভাগ মানুষের পর্যাপ্ত খাবার জোটে না। দেশের প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভোগে ।
আর তাই স্বাধীন বাংলাদেশে আজও অধিকাংশ বাঙালি প্রকৃত মুক্তি ও স্বাধীনতার স্বাদ পায় নি। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় যতদিন না সত্যিকার অর্থে সাম্য, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, সুশাসন, ধর্মীয় স্বাধীনতা, উন্নয়ন তথা সর্বজনের মঙ্গল নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, ততদিন সেই স্বপ্নের স্বাধীনতা আসবে না, এদেশ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হয়ে ওঠতে পারবে না। আর তাই বহু বাঙালির জীবনে সত্যিকারের স্বাধীনতা আজো এক স্বপ্ন, এক মরীচিকা। আর তাই আজ ৪৬ বছর পরেও আপামর, বঞ্চিত, নির্যাতিত ও শোষিত জনতা অাশায় বুক বাঁধে আর পথ চেয়ে থাকে সুদূর নীলিমায়…..স্বাধীনতা নামের সোনালী পাখি একদিন অাসবে বলে।।
First Published On BD Christian News April 13, 2017
No comments:
Post a Comment