May 7, 2020

ঢাকার আর্মেনীয় ই‌তিহাস ও ঐ‌তি‌হ্যের শেষ অ‌ভিভাবক


আর্মেনিয়ান এপোস্ট‌লিক চার্চ অব হ‌লি রেজু‌রেকশন (Armenian Church of Holy Resurrection)
Courtesy: Armenian Church of Bangladesh

পুরান ঢাকার আরমানিটোলার আর্মেনিয়ান স্ট্রি‌‌টে ‌অগুনতি সুউচ্চ আবা‌সিক ভবনের মাঝখা‌নে নীরবে, কিন্তু গর্বভরে দাঁড়িয়ে এক‌টি শ্বেতকায় দ্বিতল গির্জা।

লা‌গোয়া সমা‌ধি‌ক্ষে‌ত্রে অ‌নেকগু‌লো কবর যেগু‌লো আর্মেনীয়দের স্মৃ‌তি ব‌য়ে চ‌লে‌ছে যারা আজকের বাংলাদেশের এ রাজধানী শহ‌রে একদা বস‌ত ক‌রে‌ছে ও প্রাণত্যাগ করেছে।

১৭৮১ খ্রিস্টা‌ব্দে নি‌র্মিত আর্মেনিয়ান এপোস্ট‌লিক চার্চ অব হ‌লি রেজু‌রেকশন (Armenian Church of Holy Resurrection) শুধুমাত্র এক‌টি ঐ‌তিহা‌সিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাই নয়, এ‌টি ঢাকার একদার সমৃদ্ধশালী আর্মেনীয় সম্প্রদা‌য়ের সাক্ষ্যদান ক‌রে চ‌লে‌ছে, যারা অষ্টাদশ ও উনবিংশ শত‌কে এ মহানগরীর অর্থ‌নৈ‌তিক ও সামা‌জিক জীবন‌কে  সুসমৃদ্ধ ক‌রে‌ছে।

আর্মেনীয় চা‌র্চের অদূ‌রে, ১৮৬৮ খ্রিস্টা‌ব্দে স্থা‌পিত হ‌লিক্রস ক্যাথ‌লিক চার্চ, যেখা‌নে খ্রিস্টান সম্প্রদা‌য়ের উ‌ল্লেখ‌যোগ্যসংখ্যক লো‌ক বসবাস ক‌রে।

আর্মেনিয়ান স্ট্রীট ও আরমা‌নি‌টোলা কা‌লের গ‌র্ভে মি‌শে যাওয়া এক গৌরবময় ই‌তিহা‌সের সাক্ষী। কিন্তু এ ই‌তিহাস ও ঐ‌তিহ্য হয়‌তোবা বিস্তৃতির অতলে হা‌রি‌য়ে যে‌তো য‌দি না এক মহানুভব আর্মেনীয় তা ভা‌লোবে‌সে রক্ষা কর‌তেন। তি‌নি মাই‌কেল যো‌সেফ মা‌র্টিন, ঢাকায় বসবাসকারী সর্ব‌শেষ আর্মেনীয়।

তিন দশ‌কের বে‌শি সময় ধ‌রে মা‌র্টিন ছি‌লেন এ চা‌র্চের সর্ব‌শেষ আবাসিক তত্ত্বাবধায়ক (Warden)। মূলত তার একক প্র‌চেষ্টার ফ‌লেই চার্চ‌টি আক্ষ‌রিক অ‌র্থে এক ভগ্নস্তুপ থে‌কে পুনর্জন্ম লাভ ক‌রে।

মা‌র্টি‌নের তিন মে‌য়ে - এ‌লিনর, ক্রি‌স্টিন ও শে‌রিল - বেশ অ‌নেক আ‌গে কানাডায় অ‌ভিবাসী হিসে‌বে থিতু হ‌য়ে‌ছে। কিন্তু মা‌র্টিন ও তার স্ত্রী ভে‌রো‌নিকা বাংলা‌দে‌শে র‌য়ে যান চার্চের দেখা‌শোনা কর‌তে।

‌ভে‌রো‌নিকা ২০০৩ খ্রিস্টা‌ব্দে মারা যান এবং তা‌র অ‌ন্তিম শয্যা হয় এ চা‌র্চেরই সমা‌ধি‌ক্ষে‌ত্রে। বার্ধক্যজ‌নিত স্বাস্থ্যহা‌নির কার‌ণে অ‌নেকটা বাধ্য হ‌য়ে  ২০১৪ খ্রিস্টা‌ব্দে মা‌র্টিন কানাডা চ‌লে যান। ত‌বে বাংলা‌দেশ ত্যা‌গের পূ‌র্বে তিনি এ চা‌র্চের তত্ত্বাবধায়‌কের দা‌য়িত্ব (Wardenship) হস্তান্তর ক‌রেন যুক্তরা‌ষ্ট্রের লস এ‌ঞ্জেলস নিবাসী আর্মেনীয় ব্যবসায়ী আর্মেন আরসলা‌নিয়া‌নের হা‌তে।

এ বছ‌রের ১০ এ‌প্রিল মা‌র্টিন কানাডা‌তে তার মে‌য়ে ও না‌তি-নাতনী‌দের সা‌ন্নি‌ধ্যে শা‌ন্তিপূর্ণভা‌বে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ ক‌রেন। তার দেহাবসা‌নের মাধ্য‌মে ঢাকার আর্মেনীয় ঐ‌হিত্য বাস্ত‌বিক অ‌র্থেই ই‌তিহা‌সের অংশ হ‌য়ে গেল।

ঢাকার আর্মেনীয় চার্চ ও ঐ‌তিহ্য রক্ষায় ‌মার্টি‌নের অসামান্য অবদান‌কে স্মরণ ক‌রে আ‌র্মেন আরসলা‌নিয়ান তার প্র‌তি বি‌শেষ শ্রদ্ধা জা‌নি‌য়ে‌ছেন।

"তার বহু ব্য‌ক্তিগত ত্যাগস্বীকার ও চা‌র্চের প্র‌তি সম্পূর্ণ ভ‌ক্তি ব্য‌তিত এ চার্চ ও ঢাকার আর্মেনীয় ঐ‌তি‌হ্য বহুলাং‌শে টি‌কে থাক‌তে পারত না," আ‌র্মেন ব‌লেন। বর্তমা‌নে ৬০ বছর বয়সী আর্মে‌নের জন্ম আ‌র্জে‌ন্টিনার রাজধানী বু‌য়েন্স আয়া‌র্সে।

তি‌নি আ‌রো ব‌লেন, "‌তি‌নি ও তার প‌রিবারের ব্যাপক ও অসাধারণ প্র‌চেষ্টার ফ‌লে আমা‌দের এ অ‌নিন্দ্যসুন্দর চার্চ‌টি রক্ষা পে‌য়ে‌ছে। এ অবদান চিরস্মরণীয় হ‌য়ে থাক‌বে।"

বিশ্বজু‌ড়ে হাজা‌রো অ‌ভিবাসী আর্মেনীয়র ম‌তো আর্মেনের বাবা ও মা ১৯২০ খ্রিস্টা‌ব্দের দি‌কে তৎকালীন অ‌টোমান সাম্রা‌জ্যে সংঘ‌টিত ভয়াল " আর্মেনীয় গণহত্যা" থে‌কে প্রাণ বাঁচা‌তে আর্জে‌ন্টিনা‌তে পা‌লি‌য়ে যান। পরবর্তী‌তে তি‌নি যুক্তরা‌ষ্ট্রে অ‌ভিবাসী হন।

আর্মেন প্র‌তি বছর ক‌য়েকবার বাংলা‌দে‌শে আ‌সেন চার্চের তদার‌কি করার জন্য।

মাই‌কেল যো‌সেফ মা‌র্টিন (Michael Joseph Martin)
Courtesy: Armenian Church of Bangladesh

মা‌র্টি‌নের অ‌বিস্মরণীয় কী‌র্তি


মার্টি‌নের অবদান কখ‌নোই ভু‌লে যাবার নয়, ব‌লেন লিজ (এ‌লিজা‌বেথ) চ্যাটার। লিজ একজন যুক্তরাজ্য নিবাসী এবং ভারত ও দ‌ক্ষিণপূর্ব এ‌শিয়া‌তে আর্মেনীয়দের পা‌রিবা‌রিক বংশানুক্রম বি‌শেষজ্ঞ ও ই‌তিহাস‌বিদ।

"১৯৮০ দশ‌কের মাঝামা‌ঝি‌তে এক ক‌ঠিন দু:সম‌য়ের কা‌লে মা‌র্টিন তত্ত্বাবধায়‌কের দা‌য়িত্ব নেন, যে সময় এ ঐ‌তিহা‌সিক চা‌র্চের অ‌স্তিত্ব বিপ‌ন্ন হওয়ার উপক্রম। চা‌র্চের দুরাবস্থা ও প‌রিত্যক্ত অবস্থার সু‌যোগ নি‌য়ে কিছু অসাধু ব্য‌ক্তি ও গোষ্ঠী চা‌র্চের সমস্ত সম্প‌ত্তি দখল করার প্র‌চেষ্টায় লিপ্ত হয়," লিজ জানান।

"‌তি‌নি বী‌রের ন্যায় চা‌র্চকে সকল প্রকার শত্রুর হাত থে‌কে বাঁচান ও আগ‌লে রা‌খেন। শুধুমাত্র তার কার‌নে আজ আ‌র্মেনীয় এ‌পোস্ট‌লিক চার্চ অব হ‌লি রেজু‌রেকশন গর্বভ‌রে দাঁড়ি‌য়ে আ‌ছে।"

‌বিগত ক‌য়েক বছর আ‌গে লিজ ও আ‌র্মেনের উ‌দ্যোগে বেশ ক‌য়েকজন প্রবাসী আর্মেনীয় বাংলা‌দে‌শে তা‌দের জা‌তি‌গোষ্ঠীর ই‌তিহাস ও ঐ‌তিহ্য‌কে পুনর্জাগর‌ণের উ‌দ্দে‌শ্যে এক অভাবনীয় উ‌দ্যোগ নেন, যার নাম বাংলা‌দেশ আ‌র্মে‌নিয়ান হে‌রি‌টেজ প্র‌জেক্ট। এর মূল লক্ষ্য হল বাংলা‌দেশ ও ভার‌তে আ‌র্মেনীয়দের "শেকড়ের গল্প অনুসন্ধান ও তু‌লে ধরা।"

লিজ ব‌লেন, "মা‌র্টি‌নের কী‌র্তি ও অবদান‌কে তু‌লে ধরা ও রক্ষা করা আমা‌দের দা‌য়িত্ব। আমরা মা‌র্টিন ও ভ‌বিষৎ প্রজ‌ন্মের প্র‌তি এ কার‌ণে দায়বদ্ধ।"

মা‌র্টি‌নের জন্ম ১৯৩০ খ্রিস্টা‌ব্দে, বার্মার তৎকালীন রাজধানী রেঙ্গু‌নে (বর্তমান ইয়াঙ্গুন)। তার পিতা ও মাতা উভ‌য়ে আ‌র্মেনীয়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় থে‌কে তার প‌রিবা‌র ভার‌তের কলকাতা শহ‌রে স্থায়ীভা‌বে বাস কর‌তে শুরু ক‌রে।

কলকাতার বি‌ভিন্ন আ‌র্মেনীয় শিক্ষা প্র‌তিষ্ঠা‌নে পড়াশুনা শেষ ক‌রে মা‌র্টিন তার বাবার ব্যবসা প্র‌তিষ্ঠান, মা‌র্টিন এন্ড সন্স-এ যোগদা‌নের মাধ্য‌মে কর্মজীবন শুরু ক‌রেন। পরবর্তী‌তে তিনি এক পাট ব্যবসা প্র‌তিষ্ঠা‌নে যোগ দেন, এবং এক সময় নি‌জস্ব ব্যবসা শুরু ক‌রেন, যার ম‌ধ্যে ছিল নৌপ‌রিবহন, পাট ও ই‌লেক‌ট্রিক সামগ্রী ইত্যা‌দি।

১৯৮০-র দশ‌কের মাঝামা‌ঝি মা‌র্টিন জান‌তে পা‌রেন যে সি‌দ্দিক নামক একজন স্থানীয় যা‌কে আ‌র্মেনীয় চা‌র্চের দেখা‌শোনা করার দা‌য়িত্ব দেয়া হ‌য়ে‌ছিল, সে ক‌য়েকজন স্থানীয় ও বি‌দেশীর সা‌থে যোগসাজশ ক‌রে চার্চ ও চা‌র্চের সম্প‌ত্তি হা‌তি‌য়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র কর‌ছে। শু‌নে মা‌র্টিন খুব রুষ্ট হন এবং দ্রুত ঢাকা চ‌লে আ‌সেন।

‌তি‌নি দেখেন যে চা‌র্চের খুব করুণ অবস্থা- মূল ভবনের ভগ্নদশা, চা‌র্চের সমা‌ধি‌ক্ষেত্র আবর্জনাপূর্ণ ও ঘা‌সে জঙ্গল হ‌য়ে আ‌ছে এবং চা‌র্চের সম্প‌ত্তি বেদখল হ‌য়ে আ‌ছে।

মা‌র্টিন এক এক ক‌রে সকল বাধা বিপ‌ত্তি নির্ভীকভা‌বে মোকা‌বেলা কর‌লেন। নানা রকম হুম‌কি, দুর্ব্যবহার ও মামলা মোকদ্দমা, কোন কিছুই তা‌কে দ‌মি‌য়ে রাখ‌তে পারল না। তি‌নি নি‌জের প‌কে‌টের টাকা খরচ ক‌রে চার্চ‌কে পুনরুদ্ধা‌রের প্রয়াস নি‌লেন এবং চা‌র্চের বেদখল সম্প‌ত্তি ফি‌রি‌য়ে এ‌নে "আ‌র্মে‌নিয়ান প্লাজা" না‌মের এক‌টি মা‌র্কেট প্র‌তিষ্ঠা কর‌লেন, যা‌তে ক‌রে চার্চ‌টি‌কে টি‌কি‌য়ে রাখার জন্য নিয়‌মিত অ‌া‌য়ের উৎস থা‌কে।

মা‌র্টিন চা‌র্চের পা‌শে যাজক ভবনে (Parsonage House) বাস কর‌তে থা‌কেন। পাশাপা‌শি চা‌র্চের শতবর্ষী জন্ম, মৃত্যু ও বি‌য়ের রে‌জিস্টার সংরক্ষণ ক‌রেন এবং প্রাচীন সমা‌ধি ফলকগু‌লো‌র যত্ন নেন। এছাড়াও তি‌নি চা‌র্চের আ‌শেপা‌শে বাসকারী গরীব লোক‌দের জন্য মা‌সিক খাদ্য ও স্বাস্থ্য প্রকল্প হা‌তে নেন।

চা‌র্চের প্র‌তি মা‌র্টিনের ভা‌লোবাসা ও প্রয়াস কালক্র‌মে মি‌ডিয়ার নজ‌রে আস‌তে শুরু ক‌রে এবং নানা‌দে‌শে বসবাসকারী আ‌র্মেনীয়রা বাংলা‌দে‌শে তা‌দের ই‌তিহাস ও ঐ‌তিহ্য সম্প‌র্কে অবগত হয়।

২০০৩ খ্রিস্টা‌ব্দে বিবি‌সির সা‌থে এক সাক্ষাৎকা‌রে মা‌র্টিন ব‌লেন, "যাই হোক না কেন, আ‌মি এ চার্চ‌কে কখ‌নো ভগ্নস্তু‌পে প‌রিণত হ‌তে দেব না।"

পুরান ঢাকার লক্ষীবাজা‌রে অব‌স্থিত হ‌লিক্রস ক্যাথ‌লিক চা‌র্চের পালক পু‌রো‌হিত ফাদার জেমস শ্যামল গ‌মেজ সিএস‌সি মাই‌কেল মা‌র্টিন‌কে একজন "‌নি:সঙ্গ কিন্তু সাহসী যোদ্ধা" হি‌সে‌বে আখ্যা‌য়িত ক‌রেন যি‌নি আ‌র্মেনীয় চার্চ ও ঐ‌তিহ্য‌কে রক্ষা ক‌রে‌ছেন, এবং তার অসামান্য ও নি‌বে‌দিতপ্রাণ জীবন সক‌লের জন্য উদাহরণস্বরুপ হি‌সে‌বে ম‌নে ক‌রেন।

"আমি বেশ ক‌য়েকবার গির্জা‌টি প‌রিদর্শন ক‌রে‌ছি এবং মা‌র্টি‌নের সা‌থেও আমার দেখা হ‌য়ে‌ছে। আ‌মি ম‌নে করি তি‌নি একজন আদর্শ খ্রিস্টান ছি‌লেন। তি‌নি কোন যাজক বা পাস্টর ছি‌লেন না, কিন্তু তার চে‌য়েও অ‌নেক বে‌শি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন ক‌রে‌ছেন, যার মাধ্য‌মে আ‌র্মে‌নিয়ান চার্চ ও জন‌গোষ্ঠীর গৌরবময় ই‌তিহাস ও ঐ‌তিহ্য পুর্নজন্ম লাভ ক‌রে‌ছে। তার জীবন আমা‌দের শিক্ষা দেয় যেন আমরা আমা‌দের ইতিহাস ও ঐ‌তিহ্য‌কে ভা‌লোবা‌সি ও রক্ষা ক‌রি," ফাদার গ‌মেজ ব‌লেন।


দক্ষিণ এ‌শিয়া ও বাংলায় আর্মেনীয় ঐ‌তিহ্য

সপ্তদশ শতক থে‌কে শুরু ক‌রে আ‌র্মেনীয়রা দ‌ক্ষিণপূর্ব ও দ‌ক্ষিণ এ‌শিয়ার বি‌ভিন্ন দে‌শে ছ‌ড়ি‌য়ে প‌ড়ে মূলত ব্যবসার উ‌দ্দে‌শ্যে। তৎকালীন ভার‌তের বাংলা প্র‌দে‌শে পাট, লবণ ও চামড়া ব্যবসায় আ‌র্মেনীয়‌দের ব্যাপক আ‌ধিপত্য ছিল।

ঢাকা শহ‌রে তারাই প্রথম টিক্কা গাড়ি (জু‌ড়ি ঘোড়ার গাড়ি) প্রচলন ক‌রে যা বহুদিন এখা‌নে যাতায়া‌তের মূল বাহন হি‌সে‌বে চালু ছিল। ঢাকা‌কে বস্ত্র, কাঁচা রেশম ও পাট ব্যবসার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হি‌সে‌বে গ‌ড়ে তুল‌তে তারা বি‌শেষ অবদান রা‌খে। ধারণা করা হয় বাংলায় চা পা‌নের প্রচলন ও জন‌প্রিয়তার পেছ‌নে আ‌র্মেনীয়‌দের অবদান র‌য়ে‌ছে।

অ‌নেক আ‌র্মেনীয় স্থানীয় ভাষা শি‌খে নেয় এবং তারা ইউ‌রোপীয় ও স্থানীয়‌দের ম‌ধ্যে দোভাষী ও মধ্যস্থতাকারী হি‌সে‌বে কাজ ক‌রে।

ধনাঢ্য আ‌র্মেনীয়রা জনকল্যাণমূলক, সামা‌জিক ও সাংস্কৃ‌তিক কর্মকা‌ন্ডেও যুক্ত হয়।

আ‌র্মেনীয় ব‌ণিক ও জ‌মিদার নি‌কোলাস পো‌গোজ ১৮৪৮ খ্রিস্টা‌ব্দে ঢাকায় পো‌গোজ স্কুল প্র‌তিষ্ঠা ক‌রেন, যা ছিল এ শহ‌রের প্রথম ব্য‌ক্তি উ‌দ্যো‌গে প্র‌তি‌ষ্ঠিত শিক্ষা প্র‌তিষ্ঠান। পো‌গোজ স্কুল আ‌জো ঢাকার অ‌ভিজাত ও শীর্ষস্থানীয় স্কুল হি‌সে‌বে সুনাম বজায় রে‌খে‌ছে।
‌নি‌কোলাস পো‌গোজ ১৮৭৪-১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ঢাকা পৌর কর্তৃপ‌ক্ষের প্রথম ক‌মিশনার‌দের একজন হি‌সে‌বে দা‌য়িত্ব পালন ক‌রেন।

‌লিজ চ্যাটার জানান, নতুন প্রজ‌ন্মের বি‌ভিন্ন দে‌শে অ‌ভিবাসন ও বৃদ্ধ‌দের মৃত্যুসহ নানা‌বিধ কার‌ণে ঢাকার আ‌র্মেনীয় জন‌গোষ্ঠী ধী‌রে ধী‌রে অ‌স্তিত্ব হা‌রি‌য়ে ফে‌লে। ত‌বে ভার‌তের কলকাতা, হংকং, মাল‌য়ে‌শিয়া ও সিংগাপু‌রে এখ‌নো আ‌র্মেনীয়রা বসবাস ক‌রে।

তি‌নি বলেন, "আমা‌দের ই‌তিহাস ও ঐ‌তিহ্য সম্প‌র্কে বিশ্বজু‌ড়ে আ‌র্মেনীয়দের মা‌ঝে ব্যাপক অাগ্রহ ও স‌চেতনতা সৃ‌ষ্টি হ‌য়ে‌ছে। ডি‌জিটাল যু‌গে বি‌ভিন্ন অনলাইন সংবাদ, নানা সামা‌জিক যোগা‌যোগ মাধ্য‌ম এবং স‌র্বোপ‌রি নি‌জে‌দের ম‌ধ্যে ক্রমবর্ধমান আগ্র‌হের হেতু ঢাকায় আমা‌দের অ‌নিন্দ্যসুন্দর চার্চ, ই‌তিহাস ও ঐ‌তিহ্যের কদর ক্রমশ বাড়‌ছে।"

আ‌র্মে‌নিয়া এক নজ‌রে (উই‌কি‌পি‌ডিয়া)

আ‌র্মে‌নিয়া এ‌শিয়ার প‌শ্চি‌মভা‌গে ইউ‌রে‌শিয়ার অন্তর্ভুক্ত দ‌ক্ষিণ ক‌কেশাস অঞ্চ‌লে অব‌স্থিত এক‌টি দেশ। এর আয়তন ২৯,৭৪৩ বর্গ কি‌লো‌মিটার ও লোকসংখ্যা প্রায় ত্রিশ লক্ষ। দেশ‌টি ১৯৯১ খ্রিস্টা‌ব্দে সো‌ভি‌য়েত ইউ‌নিয়ন হ‌তে স্বাধীনতা অর্জন ক‌রে। প‌শ্চি‌মে তুরস্ক দক্ষি‌ণে ইরান, পূ‌র্বে আজারবাইজান ও উত্ত‌রে জ‌র্জিয়ার সা‌থে আ‌র্মে‌নিয়ার সীমান্ত র‌য়ে‌ছে। আর্মেনীয়‌দের ভাষা ই‌ন্দো-ইউ‌রোপীয় ভাষা‌শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।

সতের থে‌কে উনিশ শতক পর্যন্ত আ‌র্মে‌নিয়া অ‌টোমান তুর্কী ও পারস্য (ইরা‌নি) সাম্রা‌জ্যের অধী‌নে ছিল ও শাসক‌দের দ্বারা নানা সম‌য়ে বি‌ভিন্ন নির্যাত‌নের শিকার হয়। ১ম বিশ্বযুদ্ধ চলাকা‌লে অ‌টোমান সাম্রা‌জ্যে প্রায় ১৫ লক্ষ আ‌র্মেনীয়‌কে মে‌রে ফেলা হয়, যা ই‌তিহা‌সে "আ‌র্মেনীয় গণহত্যা" হি‌সে‌বে কুখ্যাত হ‌য়ে আছে। সারাবি‌শ্বে ছ‌ড়ি‌য়ে ছি‌টি‌য়ে থাকা আ‌র্মেনীয়‌দের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১ কো‌টি ১০ লক্ষ ব‌লে ধারণা করা হয়।।

(মূল প্র‌তি‌বেদন হ‌তে সামান্য প‌রিমা‌র্জিত ও প‌রিব‌র্ধিত)

মূল প্র‌তি‌বেদন: The last guardian of Dhaka's Armenian heritage
বাংলা রূপান্তর: Rock Ronald Rozario
© সর্বসত্ত্ব সংর‌ক্ষিত©

No comments:

Post a Comment

দক্ষিণ এশিয়ায় ভোটের রাজনীতি এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়

Bangladeshi Christians who account for less than half percent of some 165 million inhabitants in the country pray during an Easter Mass in D...