Jul 19, 2020

আর্চ‌বিশপ ম‌জেস এম. কস্তা, সিএস‌সি: এক‌টি ব্য‌ক্তিগত সাক্ষাৎ ও পর্যা‌লোচনা



সদ্য প্রয়াত আর্চ‌বিশপ ম‌জেস মন্টু কস্তা, সিএস‌সি ম‌হোদ‌য়ের সা‌থে আমার প্রথম প‌রিচয় ১৯৯৬ খ্রিস্টা‌ব্দে, জাতীয় ক্যাথ‌লিক প‌ত্রিকা সাপ্তা‌হিক প্র‌তি‌বেশীর সৌজ‌ন্যে। তখন আ‌মি ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র, বয়স স‌বে দশ পে‌ড়ি‌য়ে এগা‌রো। প্র‌তি‌বেশী প‌ড়ে জানলাম ৪৬ বছর বয়সী ফাদার ম‌জেস‌কে পোপ ২য় জন পল দিনাজপুর ধর্মপ্র‌দে‌শের বিশপ নিযুক্ত ক‌রে‌ছেন। সে সময় ‌তি‌নি ছি‌লেন বাংলা‌দে‌শের সর্বক‌নিষ্ঠ ক্যাথ‌লিক বিশপ। ১৯৮১ খ্রিস্টা‌ব্দে প‌বিত্র ক্রুশ (Holy Cross) সম্প্রদা‌য়ের যাজক হি‌সে‌বে অ‌ভি‌ষে‌কের ১৫ বছ‌রের মাথায় তি‌নি এ মান্ড‌লিক গুরুদা‌য়িত্ব পান। তাঁর সম্প‌র্কে খুব বে‌শি কিছু জানা সম্ভব ছিল না, কারণ এ‌কে তো আমার বয়স ছিল কম এবং তখন বর্তমা‌ন জমানার ম‌তো গণমাধ্যম (মূলধারা ও ধর্মীয়) ও সামা‌জিক যোগা‌যোগ মাধ্য‌ম ছিল না, তথ্য পাওয়া ছিল ক‌ঠিন ব্যাপার।

পরবর্তীকা‌লে আমার সে‌মিনারী জীব‌নে (১৯৯৯-২০০৭) যাজক ও বিশপ ম‌জেস সম্প‌র্কে জানার সু‌যোগ হ‌য়ে‌ছে এবং বি‌ভিন্ন প্রোগ্রা‌মে উনার সা‌থে সাক্ষাৎ হ‌য়ে‌ছে। এক অজ্ঞাত কারণে, অ‌ধিকাংশ সেমিনারীয়া‌নের ম‌ধ্যে বিশপ ও আর্চ‌বিশপ‌দের সম্প‌র্কে বি‌শেষ ভী‌তি কাজ ক‌রে, তারা তা‌দের কাছ থে‌কে দূরত্ব বজায় রা‌খে। আমিও তাঁর ব্য‌তিক্রম ছিলাম না। সুতরাং সে‌মিনারী জীব‌নে বিশপ ম‌জেসসহ অন্যান্য ধর্মগুরু‌দের সা‌থে অ‌নেকবার সাক্ষাৎ হ‌লেও ব্য‌ক্তিগত আলা‌পের সু‌যোগ ঘ‌টে‌নি। উনার সা‌থে স‌ত্যিকার সাক্ষাত ও প‌রিচয় হয় ২০০৯ খ্রিস্টা‌ব্দে ময়মন‌সিং‌হের বিড়ইডাকুনী ধর্মপল্লী‌তে যেখা‌নে ২৪তম জাতীয় যুব দিব‌সের আসর ব‌সে‌ছিল, যার মূলভাব ছিল: "আমরা তো আশা-ভরসা রে‌খে‌ছি স্বয়ং জীবনময় ঈশ্ব‌রেরই উপর" (১ তিম‌থি ৪:১০)।

বিশপ ম‌জেস তখন বিশপীয় (CBCB) যুব ক‌মিশ‌নের চেয়ারম্যান। আ‌মি তখন সদ্য সে‌মিনারী ছে‌ড়ে হংকংভি‌ত্তিক ক্যাথ‌লিক সংবাদ মাধ্যম UCAN-এ চাকু‌রি শুরু ক‌রে‌ছি এবং বিশপীয় যুব ক‌মিশ‌নের সে‌ক্রেটা‌রি ফাদার প্যা‌ট্রিক শিমন গ‌মে‌জের উৎসা‌হে ক‌মিশনের নির্বাহী ক‌মি‌টির সদস্য প‌দে যোগদান ক‌রে‌ছি। যুব দিব‌সে অংশ নি‌য়ে‌ছিলাম রি‌পো‌র্টিং ও ডকু‌মে‌ন্টেশন উপ-ক‌মি‌টির আহ্বায়ক হি‌সে‌বে এবং UCAN এর জন্য রি‌পোর্ট করার উ‌দ্দে‌শ্যে।  চারদি‌নের প্রোগ্রা‌মে প্র‌তি রা‌তে মূল্যায়ন মি‌টিং হ‌তো কেন্দ্রীয় ক‌মি‌টির সদস্যবৃন্দ ও সকল ক‌মি‌টির আহ্বায়কদের সমন্ব‌য়ে। বিশপ ম‌জেস সকল মি‌টিং‌য়ে উপ‌স্থিত থাকার চেষ্টা কর‌তেন এবং যে‌কোন প্রকার সমস্যার সমাধান ক‌রে দি‌তেন। অ‌নেক সময় বি‌ভিন্ন বিষয় নি‌য়ে প‌রি‌স্থি‌তি কিংবা সদস্যরা উত্তপ্ত হ‌লেও তি‌নি বরাবর সহনশীল ছি‌লেন, এবং যা সব‌চে‌য়ে ভা‌লো সেটার বিষ‌য়ে সিদ্ধা‌ন্তে আস‌তে সহায়তা কর‌তেন। তখন থে‌কে তাঁর প্র‌তি আমার বি‌শেষ শ্রদ্ধা জ‌ন্মে। যুব দিব‌সে তি‌নি খুব বে‌শি বক্তব্য দেন নি য‌দিও পু‌রো সময় তি‌নি ‌গোটা প্রোগ্রা‌মে উপ‌স্থিত ছি‌লেন। ‌তাঁর বলা অ‌নেক সুন্দর কথার মা‌ঝে যেটা বে‌শি ম‌নে প‌ড়ে তা হ‌লো, "যুব দিবস এক‌টি উৎসব এবং এক‌টি তীর্থযাত্রা, যেখা‌নে আমরা যীশুর স‌ঙ্গে পথ চল‌তে ও বে‌ড়ে উঠ‌তে শি‌খি প্রার্থনায় ও আনন্দময়তায়।"

‌বিড়ইডাকুনীর প‌রে রাজশাহী‌র পালকীয় সেবা‌কে‌ন্দ্র (২০১০), ঢাকার কেওয়াচালা ধর্মপল্লী (২০১১) ও চট্টগ্রা‌মের দিয়াং আশ্র‌মে আঞ্চ‌লিক ( ২০১১) ও জাতীয় (২০১৩)  যুব দিব‌সে বিশপ ম‌জে‌সের সাহচর্য্য লা‌ভের সু‌যোগ হ‌য়ে‌ছে। ২০১১ খ্রিস্টা‌ব্দে চট্টগ্রা‌মের বিশপ প‌দে আসীন হওয়ার এবং ২০১৭ খ্রিস্টা‌ব্দে আর্চ‌বিশপ প‌দে অ‌ধিষ্ঠান অনুষ্ঠান কাভার করে‌ছি। এছাড়াও বি‌ভিন্ন সম‌য়ে নানা সামা‌জিক ও ধর্মীয় ইস্যুভি‌ত্তিক রি‌পোর্ট কর‌তে গি‌য়ে বেশ ক‌য়েকবার তাঁর সাক্ষাৎকার নি‌য়ে‌ছি। ব্য‌ক্তিগত সম্মান ও শ্রদ্ধার বাই‌রে ধর্মগুরু ম‌জে‌সের সা‌থে আমার প‌রিচয় ও সম্পর্ক মূলত পেশাদা‌রিত্বের এবং একদার যুবকর্মী হি‌সে‌বে। তাঁর সা‌থে কোন ব্য‌ক্তিগত ও প্রা‌তিষ্ঠা‌নিক লেন‌দেন করার প্র‌য়োজন বা সু‌যোগ হয় নি কোন‌দিন। তবুও ক‌রোনা ভাইরা‌সে তাঁর রোগ‌ভোগ, রোগমু‌ক্তি এবং সর্ব‌শেষ বিগত ১৩ জুলাই ম‌স্তি‌স্কে রক্তক্ষরণজ‌নিত স্ট্রো‌কে আক্রান্ত হ‌য়ে অকস্মাৎ মৃত্যু আমা‌কে যারপরনাই ব্য‌থিত ক‌রে‌ছে। তাঁর ম‌তো একজন সু‌যোগ্য ধর্মগুরুর সহসা প্রস্থান বাংলা‌দে‌শের ক্ষুদ্র ক্যাথ‌লিক খ্রিস্টান সম্প্রদা‌য়ের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষ‌তি। তাঁর জীবন ও ক‌র্মের নি‌র্মোহ বি‌শ্লেষণ ক‌রে এবং তাঁর সা‌থে ব্য‌ক্তিগত অ‌ভিজ্ঞতার বরা‌তে একথা নি‌র্দ্বিধায় বলা যায় তি‌নি ছি‌লেন এক‌মেবা‌দ্বিতীয়ম (অনন্য, তুলনাহীন)। মানুষমা‌ত্রেই সক‌লের সবলতা ও দুর্বলতা থা‌কে, তি‌নিও তাঁর ব্য‌তিক্রম ছি‌লেন না। কিন্তু তাঁর সবলতাগু‌লো অসামান্য ও অভাবনীয়, যা তাঁ‌কে বাংলাদেশ ক্যাথ‌লিক মন্ডলী‌তে ও ভক্ত‌দের হৃদ‌য়ে চিরস্থায়ী আসনে প্র‌তি‌ষ্ঠিত ক‌রে‌ছে। সে কার‌ণে দিনাজপুর ও চট্টগ্রা‌মের পর ঢাকার আগামী আর্চ‌বিশপ প‌দে তি‌নি একজন জোরা‌লো প্রার্থী ছি‌লেন, বিশ্বস্ত সূ‌ত্রে তা জানা গে‌ছে। কিন্তু ৭০ বছর বয়‌সে তাঁর মহাপ্রয়াণ মন্ডলী‌তে অ‌ধিকতর সেবাদা‌নের পথ রুদ্ধ ক‌রে‌ছে। তাঁর মহাজীব‌নের মূল্যায়ন করা বেশ দুস্কর, তবুও আমার ক্ষুদ্র অ‌ভিজ্ঞতায় তাঁর কী‌র্তি ও প্রয়া‌সের প্র‌তি আ‌লোকপাত করার প্র‌য়াস।

যুবা‌দের বন্ধু

ছাত্রজীব‌নে ম‌জেস কস্তা যেমন মেধাবী ছাত্র ছি‌লেন, তেম‌নি একজন তু‌খোড় ফুটবল, বা‌স্কেটবল, ভ‌লিবল ও হ্যান্ডবল খেলোয়াড় ছি‌লেন। এছাড়া তি‌নি বি‌ভিন্ন ছাত্র ও যুব সংগঠ‌নের সা‌থে যুক্ত ছি‌লেন স্কুল ও ক‌লেজ জীব‌নে। তাঁর ম‌তো ক্রীড়া‌মোদী ও যুব‌প্রেমী যে বিশপীয় যুব ক‌মিশ‌নের প্রধান প‌দে আসীন ছি‌লেন প্রায় নয় বছ‌রের ম‌তো সেটা বাংলা‌দে‌শের ক্যাথ‌লিক যুবা‌দের জন্য বড় আশীর্বা‌দের ব্যাপার। ‌তি‌নি পোপ ২য় জন প‌লের ম‌তোই যুবা‌দের সমাজ, মন্ডলী ও দে‌শের ভ‌বিষ্যৎ কর্ণধার হি‌সে‌বে দেখ‌তেন। যুব কার্যক্রম, বি‌শেষত যুব দিব‌সে তি‌নি তাঁর কথা ও কা‌জে সেটা বারংবার ব্যক্ত ক‌রে‌ছেন। বেশ ক‌য়েকবার তি‌নি ব‌লে‌ছেন, "ক্যাথ‌লিক যুব গঠ‌নের মূল উ‌দ্দেশ্য তাদের শুধু নী‌তিশিক্ষা দেয়া নয়, বরং তারা কীভা‌বে যীশুর শিষ্য হ‌য়ে উঠ‌তে পা‌রে ও যীশুর সা‌থে যাত্রা কর‌তে শে‌খে, সেটা তা‌দের‌কে ‌শেখা‌নো।" সে কার‌ণে যুব দিব‌সে তি‌নি উপ‌স্থিত থাক‌লেও বে‌শি বক্তব্য দি‌তে দেখা যে‌তো না। তি‌নি যুবক ও যুবতী‌দের সা‌থে অ‌নেক ব্য‌ক্তিগত আলাপ কর‌তেন, আর তারাও মনখু‌লে কথা বল‌তো। আর সেটা অ‌নেকে পছন্দ কর‌তো। প্রোগ্রামের বাই‌রেও তি‌নি যুবা ও যুবাকর্মী‌দের স‌ঙ্গে ব্য‌ক্তিগত যোগা‌যোগ রাখ‌তেন, তাঁ‌দের বি‌ভিন্নভা‌বে উৎসাহ দি‌তেন। সে সম‌য়ের যুবকর্মী অ‌নে‌কে তাঁর অবদা‌নের কথা শ্রদ্ধাভ‌রে স্মরণ ক‌রে তাঁ‌কে যুব‌দের বন্ধু ও গ‌তিশীল যুবগঠ‌নে পু‌রোধা (Pioneer of dynamic youth formation) ব‌লে স্বীকৃ‌তি দেন, তাদের ম‌ধ্যে অন্যতম বিপুল এ‌লিট গনসাল‌ভেস, সুবীর কাস্মীর পে‌রেরা, মা‌নিক উইল‌ভার ডি'কস্তা, ক্লিফটন গ‌মেজ, হিউবার্ট স‌নি রত্ন, ট‌নি উইলসন ডি'কস্তা, র‌বি মার্ডী প্রমুখ, যারা যুব কার্যক্রম ছে‌ড়ে দেয়ার প‌ড়েও নানাভা‌বে মন্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ কা‌জে আন্ত‌রিক সহায়তা ক‌রে‌ছে ও কর‌ছে। বর্তমা‌নে এমন উৎসাহ প্রদান ও প্রবণতার ঘাট‌তি লক্ষ্য করা যায়, যার কারণ অনুসন্ধান, বি‌শ্লেষণ ও অব‌লোপন করা সম‌য়ের দাবী।

দূরদর্শী, জ্ঞানী ও প্রবক্তা

দশ ভাই বো‌নের ম‌ধ্যে ক‌নিষ্ঠতম সন্তা‌নের নাম মহান প্রবক্তা ম‌জেসের নামানুসা‌রে কে রে‌খে‌ছিল তা আজ জানার সম্ভাবনা খুব কম। ত‌বে তি‌নি তাঁর জীবদ্দশায় প্রমাণ ক‌রে‌ছেন নামকর‌ণের সার্থকতা। বিশপ হওয়ার পূ‌র্বে ১৫ বছর যাজকীয় জীব‌নে তি‌নি স্বল্পকাল (১৯৮১-১৯৮৪) পর্যন্ত সহকারী পালক হি‌সে‌বে শ্রীমঙ্গল ও জলছত্র ধর্মপল্লী‌তে কাজ ক‌রেন। দু‌টোই বেশ বড় আ‌দিবাসী অধ্যু‌ষিত ধর্মপল্লী। তি‌নি গরীব ও অসহায় খ্রিস্টভক্ত‌দের আধ্যাত্মিক ও পালকীয় সেবার পাশাপা‌শি মানবা‌ধিকার রক্ষায় স‌চেষ্ট ছি‌লেন, কারণ উভয় স্থা‌নে সামা‌জিক, রাজ‌নৈ‌তিক ও অর্থ‌নৈ‌তিকভা‌বে তারা ছিল বঞ্চনার শিকার। কিন্তু তাঁর এ সেবাকাজ বে‌শি‌দিন অব্যহত রাখা গেল না, কারণ কর্তৃপক্ষ তাঁ‌কে উচ্চ‌শিক্ষা ও মন্ডলীর বৃহৎ প‌রিস‌রে নি‌য়ো‌জিত করার প‌রিকল্পনা ক‌রেন। রো‌মের সাধু টমাস আকুইনাস বিশ্ব‌বিদ্যালয় থে‌কে ধর্মতত্ত্ব ও আধ্যাত্মিকতা বিষ‌য়ে ১৯৮৬ খ্রিস্টা‌ব্দে এবং গ্রেগরীয়ান বিশ্ব‌বিদ্যালয় হ‌তে ম‌নো‌বিদ্যা ও কাউ‌ন্সে‌লিং বিষ‌য়ে ১৯৮৯ খ্রিস্টা‌ব্দে তি‌নি লাই‌সেন‌শি‌য়েট ডি‌গ্রি লাভ ক‌রে তি‌নি দে‌শে ফিরে আ‌সেন। তাঁর জ্ঞান ও দক্ষতার প্রমাণ রে‌খে তি‌নি জাতীয় উচ্চ সে‌মিনারী‌তে ম‌নো‌বিদ্যা ও পালকীয় ধর্মতত্ত্ব বিষ‌য়ে শিক্ষকতা ক‌রেন, হ‌লিক্রস সে‌মিনারী ও স্কলা‌টি‌কে‌টের প‌রিচালক এবং উচ্চ সে‌মিনারীর প‌রিচালক প‌দে দা‌য়িত্ব পালন ক‌রেন। তি‌নি হ‌লিক্রস যাজক সম্প্রদা‌য়ের কেন্দ্রীয় ক‌াউ‌ন্সি‌লের একজন সদস্য ছি‌লেন। ১৯৯৬ খ্রিস্টা‌ব্দে দিনাজপু‌রের ৫ম বিশপ ও ২০১১ খ্রিস্টা‌ব্দে চট্টগ্রা‌মের ৬ষ্ঠ বিশপ নিযুক্ত হবার পর থে‌কে শুধু সে দুই ধর্মপ্র‌দেশ নয় বরং গোটা বাংলা‌দেশ মন্ডলী‌তে তি‌নি অবদান রে‌খে‌ছেন। ২০০৭ খ্রিস্টাব্দ হ‌তে মৃত্যু অব‌ধি তি‌নি সি‌বি‌সি‌বির মহাস‌চিব ছি‌লেন। তি‌নি গুরুত্বপূর্ণ ক‌মিশনসমূহ যেমন উপাসনা ক‌মিশন, যুব ক‌মিশন, সে‌মিনারী ক‌মিশন, স্বাস্থ্য ক‌মিশন প্রভৃ‌তির চেয়ারম্যান হি‌সে‌বে দক্ষতার সা‌থে কাজ ক‌রে‌ছেন। তাঁর সা‌থে যেসব যাজক, ব্রতধারী ও খ্রিস্টভক্ত কাজ ক‌রে‌ছেন তাঁরা সক‌লে তাঁর জ্ঞান, দূরদর্শীতা ও দক্ষতার কথা শ্রদ্ধাভ‌রে স্মরণ ক‌রে। এমন গুণী, জ্ঞানী ও দক্ষ ধর্মপাল শত বছ‌রে একজন জন্মায়, তার সমকক্ষ হওয়া বাস্ত‌বিকই দুস্কর।

মহাপ্রাণ মিশনারী

ব্য‌ক্তিজীব‌ন তথা যাজকীয় ও বিশপীয় জীব‌নে তি‌নি খ্রিস্টমন্ডলী‌তে মিশনারী‌দের অবদানকে অ‌নেক শ্রদ্ধা ও সম্মা‌নের সা‌থে স্মরণ কর‌তেন এবং স্থানীয় মন্ডলীর মিশনারী হ‌য়ে উঠার প্র‌তি বি‌শেষ গুরুত্ব দি‌তেন। তাঁর দীর্ঘ‌দি‌নের সহকর্মী‌দের ভা‌ষ্যে, দিনাজপুর ও চট্টগ্রা‌মে তি‌নি যাজক, ব্রতধারী ও খ্রিস্টভক্ত‌দের "‌মিশনারী হওয়ার চ্যা‌লেঞ্জ" দি‌তেন, কারণ তি‌নি বিশ্বাস কর‌তেন, "মন্ডলী য‌দি স্থানীয় মিশনারী হ‌য়ে উঠ‌তে না পা‌রে এবং নি‌জে নি‌জে বে‌ড়ে উঠা ও সমৃ‌দ্ধি লাভ না কর‌তে পা‌রে, ত‌বে মন্ডলীর কোন ভ‌বিষ্যৎ নেই।" তি‌নি স্থানীয় মিশনারী তথা ধর্ম‌শিক্ষক‌দের (কা‌টে‌খিস্ট) প্র‌তি বি‌শেষ সহানুভূ‌তিশীল ছি‌লেন, তাঁ‌দের নিয়‌মিত খোঁজ খবর রাখ‌তেন, তা‌দের সু‌বিধা অসু‌বিধার কথা ভাব‌তেন।

‌আদিবাসী খ্রিস্টান অধ্যু‌ষিত দিনাজপু‌রে তি‌নি তাঁর ধর্মপা‌লের সাধারণ দা‌য়িত্ব পাল‌নের পাশাপা‌শি দূর দূরা‌ন্তে নি‌বে‌দিতপ্রাণ মিশনারীর ন্যায় ছু‌টে ‌গে‌ছেন নিয়‌মিত, যেখা‌নে খ্রিস্টভক্তরা হয়‌তো বছ‌রে দু'একবার খ্রিস্টযাগের সু‌যোগ পায়। কখ‌নো গা‌ড়ি‌তে, মটরসাই‌কে‌লে ও পায়ে হেঁ‌টে তি‌নি ভ্রমণ ক‌রে‌ছেন অক্লান্তভা‌বে। তি‌নি বিশ্বাস কর‌তেন প্রেরণকর্মী হি‌সে‌বে ভক্ত‌দের সা‌থে নিয়‌মিত যোগা‌যোগ রক্ষা ব্যতিত মন্ডলী ভা‌লোভা‌বে টিক‌তে পার‌বে না। তাঁর এ মহাপ্রাণ মিশনারী ভূ‌মিকার জন্য তি‌নি দিনাজপু‌রের সর্বজন‌প্রিয় মেষপালক হ‌তে পে‌রে‌ছি‌লেন, আজো সর্বত্র লো‌কে তাঁ‌কে শ্রদ্ধাভ‌রে স্মরণ করে।

‌দিনাজপু‌র থে‌কে চট্টগ্রা‌মে এসে তি‌নি তাঁর মিশনারী চ‌রিত্র‌টি‌কে বজায় রে‌খে‌ছি‌লেন। সমত‌লের নোয়াখালী, চাঁদপুর থে‌কে শুরু ক‌রে পার্বত্য চট্টগ্রা‌মের দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চ‌লে নৌকায় চ‌ড়ে, পা‌য়ে হেঁ‌টে তি‌নি বহুপথ অ‌তিক্রম ক‌রে ভক্ত‌দের সা‌থে সাক্ষাৎ কর‌তে ছু‌টে গে‌ছেন ও তা‌দের যথাযথ সহায়তার প্র‌য়োজ‌নে হাত বা‌ড়ি‌য়ে দি‌তেন। পাহা‌ড়ে ধর্মপল্লীগু‌লোর নিজস্ব আয় নেই, তাই তা‌দের সর্বাত্মক সহ‌যো‌গিতা ক‌রে‌ছেন অর্থ‌নৈ‌তিকভা‌বে ও কাঠা‌মোগত উন্নয়‌নের মাধ্য‌মে। কা‌টে‌খিস্ট‌দের যতটুকু সম্ভব সহায়তা দি‌য়ে তা‌দের চ্যা‌লেঞ্জপূর্ণ এ কা‌জে উৎসাহ দি‌য়ে গে‌ছেন। চট্টগ্রা‌মে পালকীয় কা‌জে সহায়তা কর‌তে দেশী ও বি‌দেশী ধর্মসংঘ‌কে আমন্ত্রণ জা‌নি‌য়ে‌ছেন। ২০১৯ খ্রিস্টা‌ব্দে চট্টগ্রা‌মে খ্রিস্ট‌বিশ্বাস আগম‌নের ৫০০ বছর পূ‌র্তি উৎস‌বের প্রাক্কা‌লে তি‌নি সবার প্র‌তি আহ্বান জানান মিশনারী‌দের দ্বারা স্থা‌পিত "বিশ্বাসের পুনর্জাগরণ" ঘটা‌তে। তি‌নি স‌তের শত‌কের ধর্মশহীদ যাজকগণ ও ভক্ত‌দের স্মৃ‌তির প্র‌তি শ্রদ্ধা জা‌নি‌য়ে এক‌টি স্মৃ‌তিস্তম্ভ নির্মাণ ক‌রেন এবং দিয়াং‌য়ে খ্রিস্টশহীদ‌দের স্মৃ‌তিজ‌ড়িত পাঁচশতবর্ষী সমা‌ধি‌ক্ষেত্র‌টি পুনরুদ্ধার ক‌রেন। এক বছর ধ‌রে জু‌বিলী বর্ষ পালন শেষে  ২০১৯ খ্রিস্টা‌ব্দে দিয়াং‌য়ে মহাআড়ম্বরপূর্ণ খ্রিস্ট‌বিশ্বা‌সের জু‌বিলী পাল‌নে তি‌নিই ছি‌লেন কান্ডারি।

স্থানীয় মন্ডলীর পু‌রোধা

স্থানীয় মন্ডলী‌কে সামা‌জিক ও অর্থ‌নৈ‌তিকভা‌বে শ‌ক্তিশালী করার প্র‌তি তি‌নি স‌বি‌শেষ জোর দি‌তেন। সেজন্য দিনাজপুর ও চট্টগ্রা‌মে তি‌নি সুনি‌র্দিষ্ট পালকীয় নী‌তি ও গুরুত্ব নিরুপণ ক‌রে অগ্রসর হ‌য়ে‌ছেন। দিনাজপু‌রে তাঁর পালকীয় প‌রিকল্পনা মূল ভি‌ত্তি ছিল ধর্ম‌শিক্ষা ও ধর্ম‌বিশ্বা‌সের গঠন, শিক্ষা ও সংস্কৃ‌তি, স্বাস্থ্য ও অর্থ, সাংগঠ‌নিক কাঠা‌মো এবং নতুন এলাকায় বাণী প্রচার। সে কার‌ণে তি‌নি যেমন যাজক, সন্ন্যাসব্রতী ও ভক্ত জনগ‌ণের বিশ্বা‌সের গভীরতা ও আধ্যা‌ত্মিকতা জন্য আধ্যা‌ত্মিক গঠন কেন্দ্র, পালকীয় সেবা কেন্দ্র এবং তীর্থস্থান স্থাপন ও জন‌প্রিয় ক‌রে‌ছেন, তে‌মনি অনগ্রসর আদিবাসী‌দের ম‌ধ্যে শিক্ষা বিস্তার ও তা‌দের সাংস্কৃ‌তিক জাগরণ, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও বৃ‌ত্তিমূলক শিক্ষা‌কেন্দ্র, সংগঠন জোরদার ও নেতৃত্ব গঠন এবং নতুন বাণী প্রচা‌রের ক্ষেত্র আ‌বিষ্কার ও প‌রিচর্যা ক‌রে‌ছেন। তি‌নি স্থানীয় মন্ডলী জোরদা‌রের জন্য যাজক ও সন্ন্যাস জীব‌নে আহ্বান বৃ‌দ্ধির চেষ্টা চালান, যা‌তে আ‌দিবাসী ছে‌লে মে‌য়েরা ধর্মীয় জীব‌নে প্র‌বেশ ক‌রে। তি‌নি চাই‌তেন যেন তারা ধর্মীয় জীব‌নে না থাক‌লেও সু‌শিক্ষা লাভ ক‌রে এক‌দিন জীব‌নে প্র‌তি‌ষ্ঠিত হ‌তে পা‌রে এবং মন্ডলীর সম্পদ হ‌তে পা‌রে।

চট্টগ্রা‌মেও তি‌নি একইভা‌বে সু‌নি‌র্দিষ্ট পালকীয় প‌রিকল্পনা ক‌রে এ‌গি‌য়ে‌ছেন এবং স্থানীয় মন্ডলী‌কে দৃঢ় করার প্রয়াস নি‌য়ে‌ছেন। শুধুমাত্র নতুন ধর্মপল্লী ঘোষণা, নতুন নতুন স্থাপনা নির্মাণ ও ধর্মপ্র‌দে‌শের সাংগঠ‌নিক পুণর্গঠন নয়, তি‌নি চট্টগ্রা‌মে খ্রিস্ট‌বিশ্বা‌সের শতব‌র্ষের ঐ‌তিহ্য ও গর্ব ভক্ত‌দের বারবার স্মরণ ক‌রি‌য়ে দি‌তেন। ‌ভৌগ‌লিক ও পালকীয় কার‌ণে ২০১৫ খ্রিস্টা‌ব্দে চট্টগ্রাম হ‌তে পৃথক হ‌য়ে ব‌রিশাল ধর্মপ্র‌দে‌শের উদ্ভব বিশপ ম‌জে‌সের সুপ্র‌চেষ্টার ফল। একইভা‌বে সুপ্রাচীন চট্টগ্রাম ধর্মপ্র‌দেশ‌কে ২০১৭ খ্রিস্টা‌ব্দে মহাধর্মপ্র‌দে‌শে উন্নীতকর‌ণ তাঁর দূরদর্শীতা ও কর্মপ্রয়া‌সের ফল। তি‌নি দৃঢ়ভা‌বে বিশ্বাস কর‌তেন এ সম্মান চট্টগ্রা‌মের মন্ডলীর অ‌নেক আগে থে‌কে প্রাপ্য। পার্বত্য অঞ্চলে বাণী প্রচারের নতুন নতুন ক্ষেত্র (Virgin Land) তিনি খুঁজে বের করেন।

চট্টগ্রা‌মে ধর্মীয় আহ্বা‌নের করুণদশায় তি‌নি বিচ‌লিত ছি‌লেন। তাই তি‌নি সংখ্যাগ‌রিষ্ঠ আ‌দিবাসী‌দের ম‌ধ্যে আহবান বৃ‌দ্ধির জন্য বান্দরবা‌নের আলীকদ‌মে মাইনর সে‌মিনারী স্থাপন ও চালু ক‌রেন। তি‌নি দে‌খে‌ছেন তারা সে‌মিনারী‌তে এ‌লেও প‌রে চ‌লে যায়, কারণ তারা বাঙাল‌ি‌দের সা‌থে অ‌নেক সময় তাল মেলা‌তে পা‌রে না ও অস্ব‌স্তি বোধ ক‌রে। তার চিন্তা ছিল, "য‌দি তাদের জন্ম যেখা‌নে সেখান থে‌কে তু‌লে না এ‌নে সেখা‌নে লালন করা যায়, ত‌বে নিশ্চয়ই ভাল ফল দে‌বে।" নোয়াখালী‌তে পালকীয় বো‌র্ডিং তাঁর এরুপ প‌রিকল্পনা আরেক‌টি দিক। একই উ‌দ্দেশ্যে তি‌নি বান্দরবা‌নে আঞ্চ‌লিক পালকীয় কেন্দ্র ও ক‌মিশন চালু ক‌রে‌ন।

চট্টগ্রা‌ম শহ‌রে মন্ডলীর সম্পদ ও ভূ‌মির সীমাবদ্ধতা হেতু  আ‌ছে তার যথার্থ ব্যবহা‌রের উ‌দ্যোগ নেন তি‌নি। এক‌টি পালকীয় কেন্দ্র, হাসপাতাল এবং পুনর্গ‌ঠিত ক্যাথ‌লিক ক্লাব ভব‌ন তাঁর বি‌শেষ প‌রিকল্পনায় ছিল। ত‌বে নানা‌বিধ কার‌ণে, বি‌শেষত মন্ডলীর পদধারী কা‌রো কা‌রো হঠকারী সিদ্ধান্ত ও কা‌জের কার‌ণে তাঁ‌কে বাঁধার মু‌খে পড়‌তে হয় এবং জ‌টিলতার সৃ‌ষ্টি হয়। তি‌নি এ‌তে ব্য‌থিত হন এবং তি‌নি নি‌জে এস‌বের জন্য সরাস‌রি দায়ী না হ‌লেও  এর জন্য ক্ষমা চান এবং বি‌রোধী‌দের সা‌থে পুন‌র্মিল‌নের চেষ্টা চা‌লি‌য়ে যান। এক অপ্রকা‌শিত সাক্ষাৎকা‌রে তি‌নি ব‌লে‌ছি‌লেন, "যা ঘ‌টে‌ছে তা‌তে আমি মর্মাহত, এখা‌নে আমা‌দের আরো প্রজ্ঞাবান হওয়া উ‌চিত ছিল। সবাই একই মন্ডলীর সন্তান, আর আমি সবাই‌কে আস্থায় নি‌য়ে একসা‌থে সমস্যার সমাধান কর‌তে দৃঢ়প্র‌তিজ্ঞ।"

নিপী‌ড়ি‌তের সহায়

‌দিনাজপু‌রের আ‌দিবাসী জন‌গোষ্ঠীর উপর সামা‌জিক, রাজ‌নৈ‌তিক ও অর্থ‌নৈ‌তিক নি‌ষ্পেষ‌ণের বিরু‌দ্ধে তি‌নি ব‌লিষ্ঠ ভূ‌মিকা রা‌খেন। তাঁর উ‌দ্যো‌গে ভূ‌মিদস্যু ও মিথ্যা মামলায় জর্জ‌রিত অ‌নে‌কে তা‌দের ভূ‌মি অ‌ধিকার ফেরত পে‌য়ে‌ছে। তাঁর চিন্তা ও উৎসা‌হে বি‌ভিন্ন ধর্মপল্লী তা‌দের নিজস্ব সম্পদ ও জ‌মি ব্যবহার ক‌রে স্ব‌নির্ভর হওয়ার প্রয়াস শুরু ক‌রে, যা এখ‌নো অব্যহত আ‌ছে। লালম‌নিরহাট ও খা‌লিপপুর ধর্মপল্লীর সম্পদ রক্ষায় তি‌নি জীব‌নের ঝুঁ‌কি নি‌য়ে ‌খ্রিস্টান‌দের বৃহৎ সমা‌বেশ ঘ‌টি‌য়ে‌ছি‌লেন এবং পরবর্তী‌তে সরকা‌রি প্রশাস‌নের সহায়তায় গির্জার জ‌মি দখলমুক্ত কর‌তে সক্ষম হন।

পার্বত্য চট্টগ্রা‌মে গণতন্ত্রহীনতা, অশান্ত প‌রি‌বেশ ও স‌হিংসতা তাঁ‌কে প্রায়ই পী‌ড়িত কর‌তো। একবার এক সাক্ষাৎকা‌রে তি‌নি ব‌লে‌ছি‌লেন, "ওখা‌নে তো গণতন্ত্র নেই, শা‌ন্তি আস‌বে কীভা‌বে?" জাতীয় জীব‌ন ও মন্ডলী‌তে ক্ষমতার ভারসাম্য ও বি‌কেন্দ্রীকরণ তার কাম্য ছিল। তি‌নি বিশ্বাস কর‌তেন বি‌কেন্দ্রীকরণ ব্য‌তিত প্রকৃত ও টেকসই উন্নয়ন সম্ভব না। পার্বত্য চট্টগ্রা‌মে মন্ডলী ও সাধারণ খ্রিস্টভক্ত‌দের ভূ‌মি সমস্যাসহ নানা‌বিধ অসুবিধা দূর কর‌তে তি‌নি সর্বাত্মক চেষ্টা ক‌রে‌ছেন।

মায়ানমা‌রের রাখাইন হ‌তে বিতা‌ড়িত ও নির্যা‌তিত রো‌হিঙ্গা জন‌গোষ্ঠীর বেদনা তাঁ‌র মর্মস্পর্শ ক‌রে‌ছে প্রবলভা‌বে। তি‌নি বি‌ভিন্ন সম‌য়ে বিবৃ‌তি দি‌য়ে এবং গণমাধ্য‌মে বক্তব্য দি‌য়ে রো‌হিঙ্গা‌দের অ‌ধিকার প্র‌তিষ্ঠা ও পুনর্বাস‌নের জন্য উদাত্ত আহ্বান জা‌নি‌য়ে‌ছেন বিশ্ব নেতৃবৃ‌ন্দের প্র‌তি। একা‌ধিকবার তি‌নি কক্সবাজা‌রে রো‌হিঙ্গা শরণার্থী শি‌বির প‌রিদর্শন ক‌রে‌ছেন এবং তা‌দের স‌ঙ্গে সময় কা‌টি‌য়ে‌ছেন এবং সান্ত্বনা দিয়ে‌ছেন। এরুপ এক‌টি প‌রিদর্শন শে‌ষে তি‌নি মন্তব্য ক‌রেন, "এমন করুণ জীবন রো‌হিঙ্গা‌দের প্রাপ্য নয়। অ‌বিল‌ম্বে জা‌তিগত নি:স্বকরণ (Ethnic Cleansing) বন্ধ ক‌রে তা‌দের‌কে স্বসম্মা‌নে মায়ানমা‌রের নাগ‌রিক হি‌সে‌বে ফেরৎ নি‌তে হ‌বে এবং স‌হিংসতার বিচার কর‌তে হ‌বে।"

উদারতা ও সহনশীলতা

‌দিনাজপুর ও চট্টগ্রাম উভয় স্থা‌নে তাঁর উদারতা ও সহনশীলতার প্রমাণ পাওয়া যায়। তি‌নি মন্ডলী‌তে ভিন্নম‌তের প্র‌তি সহনশীল ছি‌লেন এবং বি‌ভিন্ন ম‌তের লোক‌দের নি‌য়ে এক‌ত্রে কাজ করার চেষ্টা ক‌রে‌ছেন। যাজক, ব্রতধারী ও ভক্ত‌দের ম‌ধ্যে ক্ষমতা ও দা‌য়িত্ব বন্ট‌নের ক্ষে‌ত্রে তি‌নি ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা ক‌রেন। একইভা‌বে অন্য ধর্মাবলম্বী ও তা‌দের নেতৃবৃ‌ন্দের সা‌থেও তি‌নি সুসম্পর্ক ও সম্প্রী‌তি জোরদার ক‌রে‌ছেন। একজন মুস‌লিম ধর্মগুরু তাঁর মৃত্যু‌তে শোক প্রকাশ ক‌রে ব‌লে‌ছেন, "একজন ভা‌লো বন্ধুকে হারালাম।" চট্টগ্রা‌মে যাজক সংকট ‌মোকা‌বেলায় তিনি বি‌ভিন্ন ধর্মপ্র‌দেশ থে‌কে যাজ‌কদের এবং বি‌ভিন্ন যাজক সংঘ‌কে নি‌য়ে আসেন। তাঁর প্র‌চেষ্টা ছিল আন্ত‌রিক ও নি‌র্ভেজাল, ত‌বে সক‌লে যে তাঁর উদারতা, সহনশীলতা ও আস্থার যোগ্য ছি‌লেন বা স‌ঠিক প্র‌তিদান দি‌য়ে‌ছেন সেটা জোর দা‌বি করা যা‌বে না। চট্টগ্রা‌মে যাজক‌দের সংখ্যা কম হেতু শ‌ক্তিশালী ও অংশগ্রহণমূলক ভক্তসমাজ এক সুদীর্ঘকা‌লের বৈ‌শিষ্ট্য। কেউ কেউ সেটা‌কে বদ‌লে ফেলার চেষ্টা ক‌রে‌ছেন, যা মানু‌ষের ম‌নে ক্ষো‌ভের জন্ম দি‌য়ে‌ছে। ধর্মপাল ম‌জেস ভারসাম্য নী‌তির পক্ষপা‌তি ছি‌লেন, তি‌নি সজ্ঞা‌নে এ ধর‌ণের প্রয়াস সমর্থন করার ম‌তো ব্য‌ক্তি ছি‌লেন না। তাঁর মৃত্যু‌তে বিপুল লো‌কের বিলাপ, এমন‌কি তাঁর একদার বি‌রোধী‌দের শোক প্রকাশ প্রমাণ ক‌রে তি‌নি স‌ত্যিকার একজন জনগ‌ণের ধর্মপাল ছি‌লেন।

আর্চ‌বিশপ ম‌জেস মন্টু কস্তার জীবন বাংলা‌দেশ মন্ডলীর জন্য এক সুন্দর উপহার। তি‌নি তাঁর জীবন‌কে মানু‌ষের সেবায় নির্বাহ ক‌রে‌ছেন। হয়‌তোবা বাংলা‌দেশ মন্ডলী‌কে তাঁর আ‌রো অ‌নেক কিছু দেয়ার ছিল য‌দি আ‌রো কিছু‌দিন বেঁ‌চে থাক‌তেন। খ্রিস্ট‌বিশ্বাসী হি‌সে‌বে আমরা হয়‌তো এটুকু ভে‌বে সান্ত্বনা পে‌তে পা‌রি যে ঈশ্বর তাঁর বাগা‌নের সেরা ফুল‌টি‌কে পূজার বেদী সাজা‌তে তু‌লে নি‌য়ে গে‌লেন। আর আমরা যারা র‌য়ে গেলাম নশ্বর এ পৃ‌থিবী‌তে তা‌দের এখন চিন্তা করা উ‌চিত নিজ নিজ অবস্থা‌নে থে‌কে আমরা কতটুকু এ মহাপ্রাণ ধর্মপা‌লের জীবন থে‌কে শিক্ষা নি‌য়ে‌ছি বা নে‌বো, তি‌নি যীশু‌কে তাঁর জীব‌নে ও কা‌জে যেভা‌বে ধারণ ক‌রে‌ছি‌লেন সেভা‌বে কতটুকু ধারণ করার চেষ্টা কর‌ছি। য‌দি তা কিছুটা হ‌লেও করতে পা‌রি তাহ‌লে শুধু তাঁর জীবন, শিক্ষা ও আদর্শ আমা‌দের মা‌ঝে বেঁ‌চে থাক‌বে তা নয়, বরং আমা‌দের জীবনও হ‌য়ে উঠ‌বে সার্থক ও সুন্দর।।

রক রোনাল্ড রোজা‌রিও
ঢাকা, ১৯ জুলাই, ২০২০
ছবিঃ চট্টগ্রাম মহাধর্মপ্রদেশ
© সর্বসত্ত্ব সংর‌ক্ষিত 

1 comment:

  1. আর্চ বিশপ মজেস কস্তা মহোদয়ের কর্মজীবন অনেক সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন,আমি উনার ধর্ম ছেলে,আমার এতিম জীবনে তিনি পিতার ভালবাসা দিয়ে আমার জীবনকে পরিপূর্ণ করেছেন,উনি অদ্বিতীয় উনার কোন তুলনা হয়না,আমার নিকট উনি জীবন্ত সাধু। পিটার রতন। দিনাজপুর 01715244357 আরও জানতে চাইলে। ধন্যবাদ

    ReplyDelete

দক্ষিণ এশিয়ায় ভোটের রাজনীতি এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়

Bangladeshi Christians who account for less than half percent of some 165 million inhabitants in the country pray during an Easter Mass in D...