নিম্নের গল্পগুলি (গল্প মনে হলেও সত্যি) অামাদের চারপাশের মানুষ ও জীবন সম্পর্কে কতিপয় ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে সাহায্য করবে।
টাইলসের ভেজা ফ্লোরে পা পিছলে পড়ে অার একটু হলেই অামার মাথা ফাটতে যাচ্ছিল, ঠিক তার অাগ মূহুর্তে হুইলচেয়ারে বসা ছেলেটি অামাকে ধরে ফেলে। সে বলল, "বিশ্বাস করুন অার নাই করুন, বিগত ৩ বছর অাগে ঠিক এভাবেই অামার পিঠে মারাত্নক অাঘাত পেয়েছিলাম।"
অামার বাবা বলেছিলেন, "যাও, যা করতে চাও, তার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাও। একটি সফল প্রোডাক্ট তৈরির জন্য তোমাকে পেশাদার হওয়ার প্রয়োজন নেই। অানাড়ি লোকেরাই গুগল ও অ্যাপল প্রতিষ্ঠা করেছে। পেশাদার লোকেরা বানিয়েছিল টাইটানিক।"
অামি অামার গুরুকে--৭০'র দশকের অত্যন্ত সফল একজন ব্যবসায়ী--জিজ্ঞেস করলাম জীবনে সফল হওয়ার জন্য তার সেরা ৩টি টিপস কী। ঈষৎ হেসে তিনি উত্তর দিলেন, "এমন কিছু পড়ো যা কেউ পড়ছে না, এমন কিছু ভাবো যা কেউ ভাবছে না, এবং এমন কিছু করো যা কেউ করছে না।"
মনোবিজ্ঞান ক্লাসের একটি রিসার্চ পেপারের অংশ হিসেবে অামি অামার ঠাকুরমার সাক্ষাৎকার নিলাম। তাকে জিজ্ঞেস করলাম তার ভাষায় জীবনের সাফল্য কী। তিনি বললেন, "যখন তুমি জীবনে পিছন ফিরে তাকাবে ও দেখবে তোমার স্মৃতিগুলো তোমার মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলছে, সেটাই হলো সাফল্য।"
অামি একজন জন্মান্ধ। যখন অামার বয়স অাট, তখন অামার বেসবল খেলার ইচ্ছে হয়। বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, "বাবা, অামি কি বেসবল খেলতে পারি?" বাবা বললেন, "যদি তুমি চেষ্টা করো তবেই না তুমি তা জানতে পারবে।" যখন অামি বয়:প্রাপ্ত হলাম, তখন বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, "বাবা, অামি কি শল্যচিকিৎসক (সার্জন) হতে পারবো?" তিনি বললেন, "বাছা, যদি তুমি চেষ্টা করো তবেই না তুমি তা জানতে পারবে।" অাজ অামি একজন সার্জন হয়েছি, কারণ অামি চেষ্টা করেছি।
ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে ৭২ ঘন্টা ডিউটি শেষে অামি যখন এক মুদী দোকানে, একজন মহিলা দৌঁড়ে এসে অামাকে জড়িয়ে ধরলো। অামি একটু হকচকিয়ে গেলাম, সে বুঝতে পারলো যে অামি তাকে ঠিক চিনতে পারি নি। চোখে অানন্দমিশ্রিত অশ্রু নিয়ে ও কৃতজ্ঞতাপূর্ণ হাসি দিয়ে সে বলল, "২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর অাপনি অামাকে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ধবংসস্তুপ থেকে বের করে এনেছিলেন।"
অামার প্রিয় কুকুরটি গাড়ি চাপা পড়ে মারা যায়। রাস্তার পাশে বসে অামি তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলাম। মৃত্যুর অাগ মূহুর্তে সে অামার মুখমন্ডলের অশ্রু সে চেটে মুছে দিয়ে যায়।
অামার বাবা, তিন ভাই ও দুই বোন হাসপাতালে মায়ের শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম, অার মা তার শেষ কথাগুলো বলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। মা বলেছিলেন, "নিজেকে অামার পরম ভালোবাসাময় মনে হচ্ছে। অামরা এমনভাবে প্রায়ই যদি একত্রে থাকতে পারতাম।"
হাসপাতালের ছোট বিছানায় বাবা মারা যাওয়ার কিছুক্ষণ পূর্বে অামি বাবার কপালে চুম্বন করি। বাবা মারা যাবার ৫ সেকেন্ড পর অামি উপলব্ধি করলাম বড় হওয়ার পর থেকে অাজ অবধি বাবাকে কোনদিন অার চুমু দিই নি।
খুব মিষ্টি স্বরে অামার ৮ বছর বয়সী মেয়ে অামাকে রিসাইক্লিং করা শুরু করতে বললো। অামি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "কেন?" সে উত্তরে বললো, "যাতে করে তুমি অামাকে পৃথিবীটাকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারো।" অামি অারো অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম, "কেন তুমি পৃথিবীকে রক্ষা করতে চাও?" সে বলল, "কারণ অামি অামার সবকিছু তো সেখানেই রাখি।"
অামি দেখলাম ২৭ বছর বয়সী একজন স্তন ক্যান্সারের রোগী তার দুই বছর বয়সী মেয়ের তামাশা দেখে পাগলের মতো হাসছিলো। সে মূহুর্তে অামার উপলদ্ধি হলো যে অামার জীবন নিয়ে নানা অনুযোগ ও অভিযোগ করা অামার বন্ধ করতে হবে এবং জীবনকে অাবার নতুনভাবে উদযাপন করা শিখতে হবে।
ভাঙ্গা পা নিয়ে ক্রাচে ভর দিয়ে অামার ব্যাগ ও বই সামলাতে অামার খুব কষ্ট হচ্ছিল। তা দেখে হুইলচেয়ারে অাসীন ছেলেটির মায়া হলো এবং সে অামাকে গোটা ক্যাম্পাস, এমনকি অামার ক্লাসরুম পর্যন্ত পৌঁছতে সাহায্য করলো। বিদায়ের সময় বললো, "অাশা করি এখন তোমার ভালো লাগছে।"
কেনিয়া ভ্রমণকালে জিম্বাবুয়ের এক শরণার্থীর সাথে অামার দেখা হয়। সে জানাল ৩ দিন যাবৎ সে অভুক্ত এবং তাকে দেখতেও চরম শুকনো ও অস্বাস্থ্যকর লাগছিলো। অামার বন্ধু তাকে একটি স্যান্ডউইচ দিলো যেটা সে নিজে খাচ্ছিলো। লোকটির প্রথম কথাটি ছিলো, "অামরা এটা শেয়ার করে খেতে পারি।"
মূল: সংগৃহীত
অনুবাদ: রক