Dec 5, 2021

জন ক্ল্যানসি: হংকংয়ের অকুতোভয় গণতন্ত্রকামী ও মানবাধিকার প্রবক্তা

John J. Clancy (Photo: https://hotsewai.com.hk)

জানুয়ারি ৬, ২০২১। হংকংয়ের স্বনামধন্য আইনগত সহায়তা প্রতিষ্ঠান হো সে ওয়াই এন্ড পার্টনার্সের সামনে একদল সাংবাদিক অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান। তাদের সামনে দিয়েই পুলিশ প্রখ্যাত আমেরিকান আইনজীবী জন জে. ক্ল্যানসিকে গ্রেফতার করে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে গেল। 

হংকংয়ের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রবাদপুরুষ ৭৯ বছর বয়সী ক্ল্যানসি যখন ক্রাচে ভর করে পুলিশ প্রহরায় এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন অপেক্ষমান সাংবাদিকদের মধ্য থেকে একজন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে জানতে চাইলেন জনগণের উদ্দেশ্যে তার কোন কিছু বলার আছে কিনা। 

কিছুটা নিচু গলায় কিন্তু স্পষ্টস্বরে ক্ল্যানসি বললেন, “হংকংয়ের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে আমাদের সবাইকে কাজ করে যেতে হবে।”

সারা বিশ্বের মানবাধিকার কর্মী ও গনতন্ত্রপন্থীগণ ৬ জানুয়ারিকে হংকংয়ের গণতান্ত্রিক ইতিহাসের “অন্ধকারতম দিন” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কেননা সেদিন ক্ল্যানসিসহ ৫৫ জন গণতন্ত্রপন্থী রাজনীতিবিদ ও কর্মীকে ক্যারি ল্যামের নেতৃত্বাধীন হংকং সরকার গ্রেফতার করে। এদেরকে সকলকে বেইজিংয়ের কমিউনিস্ট সরকারের মদদে গত বছরের জুনে প্রণীত কুখ্যাত জাতীয় নিরাপত্তা আইন ভঙ্গের অভিযোগে আটক করা হয়। চীনের অন্তর্ভুক্ত এ স্বায়ত্বশাসিত নগরীতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপর এত বৃহৎ পরিসরের দমন-পীড়ন এক নজিরবিহীন ঘটনা।

জন ক্ল্যানসি এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের চেয়ারম্যান এবং গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক সংগঠন পাওয়ার ফর ডেমোক্রেসির কোষাধ্যক্ষ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি “সরকারকে অস্থিতিশীল করা ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল” করার এক ষড়যন্ত্রের সঙ্গে লিপ্ত ছিলেন।

পাওয়ার ফর ডেমোক্রেসি সংগঠনটি হংকংয়ের স্থগিত নির্বাচনে বিরোধীদলীয় প্রার্থী মনোনয়নের লক্ষ্যে ২০২০ সালের জুলাই মাসে একটি অনানুষ্ঠানিক, স্বাধীন ভোটের আয়োজন করেছিল।

জন ক্ল্যানসি বেইজংপন্থী ক্যারি ল্যামের নেতৃত্বাধীন হংকং সরকারের আমলে গ্রেফতার হওয়া প্রথম বিদেশী নাগরিক। আটক হওয়ার একদিন পর তিনি জামিনে মুক্তি লাভ করেন।

এই গ্রেফতার ও আটক হওয়া ক্ল্যানসির জীবনে এক অভুতপূর্ব ঘটনা। ক্যাথলিক ধর্মযাজক থেকে মানবাধিকার আইনজীবী বনে যাওয়া ক্ল্যানসি তার জীবনের পাঁচ দশকেরও বেশি সময় এই সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশে কাটিয়ে দিয়েছেন। তাই তিনি নিজেকে হংকংয়ের বাসিন্দা হিসেবে পরিচয় দিতে বেশি পছন্দ করেন।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্ল্যানসি বলেন যে তিনি পুলিশের হাতে আটক হওয়ার ঘটনায় “ভয় পান নি, কিন্তু বিস্মিত হয়েছেন।”

তিনি বলেন, “আপনি যখন মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও কল্যাণ কামনায় অনুপ্রাণিত হয়ে কোন কাজ করেন, তখন আপনার ভয় পাবার কিছু নেই। আমি ভুল কোন কিছু করি নি। আমি সব সময় মনে করে এসেছি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য কাজ করা অতি উত্তম। মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কাঠামো যা মানুষের জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে, তার বিষয়ে যারা উদ্বিগ্ন তাদের প্রতি ভালোবাসা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি কাজ করে গেছি।”

ক্ল্যানসির অকুতোভয় বাণী যেন তার সুদীর্ঘ, বর্ণাঢ্য ও কর্মময় জীবনের সংক্ষিপ্ত প্রতিবিম্ব। তিনি তার প্রায় গোটা জীবন নানা শ্রেণীর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, বিশেষ করে হংকং ও অন্যান্য স্থানে যারা সুবিধাবঞ্চিত এবং দু:খ-কষ্ট জর্জরিত, তাদের তাদের সেবায় কাটিয়ে দিয়েছেন।

যাজক থেকে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রবক্তা

জন ক্ল্যানসির জন্ম আমেরিকার নিউ জার্সিতে, ১৯৪১ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়।

কলেজে তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় তিনি ধর্মীয় জীবনের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন এবং তিনি ম্যারীনল সম্প্রদায়ে যোগদান করেন। ১৯৬০-র দশকে সাত বছর ক্ল্যানসি ধর্মীয় গঠন লাভ করেন। এ সময়ে চলমান মার্টিন লুথার কিংয়ের নেতৃত্বাধীন নাগরিক অধিকার আন্দোলন তাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। একবার তিনি একজন সিনিয়র পুরোহিতকে নিউ ইয়র্কে আফ্রিকান আমেরিকানদের প্যারেডে যোগদান এবং সমর্থন জানাতে দেখে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত হন এবং নিজেও সেখানে যোগ দেন।

ম্যারীনল সম্প্রদায়ের যাজক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে তিনি ১৯৬৮ সালে হংকং আসেন। নিউ এশিয়া কলেজে ২০ মাসের চীনা ক্যান্টনিজ ভাষা শিক্ষা কোর্স সমাপ্ত করে তিনি ওয়াং তাও হমে অবস্থিত সাধু পলের গীর্জায় পাল-পুরোহিত হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ছাত্র-ছাত্রীদেন চ্যাপলেইন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি তার পালকীয় কাজের প্রথম তিন বছর ওয়াও তাও হমের লু ফু এনগাম এলাকায় অতিবাহিত করেন, যেখানে ছিল এক বিশাল আবর্জনা ফেলার জায়গা এবং প্রচুর দরিদ্র লোক তার আশেপাশে বাস করত। 

স্থানীয় নগর কাউন্সিলর ওয়িপ শিয়ান এবং ইতালীয় পিমে মিশনারী ফাদার মেল্লা ফ্রাংকোর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তিনি দরিদ্র লোকদের পুনর্বাসন এবং তাদের মধ্যে স্যুপ ও ন্যুডলস বিতরণের কাজ করেন। এছাড়াও তারা শিল্প শ্রমিকদের ছেলে-মেয়েদের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, কিন্ডারগার্টেন এবং শিশুসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তারা শিশু শ্রমিকদের কর্মস্থলও পরিদর্শন করেন।  

প্রতি বছর ক্ল্যানসি ছাত্রদের নেতৃত্ব বিষয়ক ক্যাম্পের আয়োজন করতেন যেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা এসে গরীব লোকদের সাথে দুই সপ্তাহ থাকত, গার্মেন্টস ও প্যাকেজিং কারখানায় কাজ করত এবং তাদের জীবন অভিজ্ঞতা করত। এটা ছিল তাদের সামাজিক বিশ্লেষণ প্রোগ্রামের অংশ। 

১৯৭৩ সালে বিশপ ফ্রান্সিস হোসু ক্ল্যানসিকে ক্যাথলিক কলেজ এসোশিয়েশনে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানান। সেখানে তিনি হংকংয়ের ছাত্র আন্দোলন প্রসারে কাজ করেন এবং কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের তিনি সমাজের প্রতি যত্ন, ন্যায়বিচার এবং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকারের জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত করেন। ইতালীয় বামপন্থী রাজনীতিবিদ ও দার্শনিক আন্তনিয়ো গ্রামসি এবং লাতিন আমেরিকায় ব্যাপক জাগরণ সৃষ্টিকারী লিবারেশন থিওলজি তাকে বিপুলভাবে আলোড়িত করে।  

ক্ল্যানসি শিক্ষকদের বেতন কমিয়ে দেয়ার সরকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গড়ে ওঠা আন্দোলনে সম্মুখসারিতে নেতৃত্ব দেন। এর ফলে একজন প্রগতিশীল যাজক হিসেবে তার খ্যাতি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তরুণ শিক্ষকগণ যে সকল প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন ক্ল্যানসি তাতে সহায়তা করেন।

এছাড়াও নতুন এক পাতাল রেল (Subway) স্টেশন স্থাপনের কারণে যেসব মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়ে তাদের ক্ষতিপূরণ আদায় এবং পুনর্বাসনের জন্য লড়াই করেন। 

তিনি হংকংয়ের জনগণের নজর কাড়েন ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে যখন চীনা-ব্রিটিশ যৌথ ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরিত হয়। এ আন্তর্জাতিক চুক্তি ছিল ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে চীনের নিকট হস্তান্তরের পর হংকংয়ের সার্বভৌম ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার রূপরেখা।

হংকংয়ের সাংবিধানিক আইন (Basic Law) এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার রূপকল্প নির্ধারক এই যুগান্তকারী সম্মেলনে ক্ল্যানসি অপরিহার্য ভূমিকা রাখেন। প্রায় ৮০টির মতো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং হাজারো হংকংবাসী এ সম্মেলনে অংশ নেন এবং সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে আইন পরিষদ (Legislative Council) গঠনের পক্ষে জোরদার দাবি তোলেন। যে ১৪ জন বক্তা উপনিবেশ-উত্তর মহানগরীতে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট মানদন্ড নির্ধারণের পক্ষে মত দেন ক্ল্যানসি ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।

ক্ল্যানসি তার বক্তব্যে বলেছিলেন, “আমরা যদি এখন আপেল গাছ না রোপণ করি, তবে ভবিষ্যতে সরকার এখানে কমলা গাছ লাগানোর চেষ্টা করবে!” তার এ অসামান্য রূপক গোটা শহরে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে। ইতিহাসের নির্মম পরিহাসে হংকংয়ের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার বর্তমান করুণ দশা তার সে আশংকাকে বাস্তবে রুপ দিয়েছে।

ক্ল্যানসি শুধুমাত্র হংকংয়ের জনগণের স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে সীমাবদ্ধ রাখেন নি। তিনি ১৯৭০ ও ১৯৮০-ও দশকে এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে গণতন্ত্রকামী এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। 

১৯৭০-এর দশকে ক্ল্যানসি এক ক্যাথলিক গ্রুপের সঙ্গে জাপান সফর করেন। সেখানে তিনি প্রস্তবিত নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য জোরপূর্বক জমি অধিগ্রহণের ফলে বাস্তুচ্যুত কৃষকদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। তিনি বিমানবন্দর বিরোধী ‘সানরিজুকা সংগ্রাম’ নামক আন্দোলনে শামিল হন।

জাপানে অবস্থানকালে ক্ল্যানসি দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক শাসক পার্ক চুং হি-র সরকার কর্তৃক আটক ও কারা অন্তরীণ ছয়জন যাজক, খ্রিস্টভক্ত ও ভিন্নমতাবলম্বী কবি কিম চি হা-র মুক্তির দাবিতে এক সাক্ষর সংগ্রহ অভিযানে নেতৃত্ব দেন। এর শাস্তি হিসাবে পার্কের গোটা শাসনামল জুড়েই ক্ল্যানসির বিরুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। 

১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখলের আগে ক্ল্যানসি বিভিন্ন অধিকার আন্দোলনে শরিক হতে ভিয়েতনাম সফর করেন। 

এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে থাইল্যান্ডের মানবাধিকার আইনজীবী সোমচাই নিলাপাইজিতের রহস্যময় অন্তর্ধানের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। সোমচাই সরকারের দমনমূলক আচরণের কঠোর সমালোচনা করার পরপরই নিখোঁজ হয়ে যান। ক্ল্যানসি থাইল্যান্ড সফর করেন এবং ক্ষতিপূরণ ও সমবেদনার চিহ্ন হিসেবে সোমচাইয়ের স্ত্রীর হাতে মানবাধিকার সম্মাননা তুলে দেন। 

‘ভালোবাসা যেখানে উৎকৃষ্ট, সেখানে ভয়ের কোন স্থান নেই’

১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে ক্ল্যানসি যাজকত্ব পরিত্যাগ করেন এবং বিয়ে করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল এর মাধ্যমে হংকংয়ের সামাজিক এবং নাগরিক জীবনে দৃঢ়ভাবে যুক্ত হওয়া। তার বন্ধু ও সহকর্মীরা বলেন যে তার জীবনে এহেন পরিবর্তন সত্ত্বেও ক্ল্যানসি বলিষ্ঠভাবে তার সকল কাজে ক্যাথলিক ধর্মবিশ্বাসের সাক্ষ্য রেখেছেন। 

হংকংয়ের আইনসভার প্রাক্তন সদস্য লি উইং তাক বলেন বহু মানুষ ক্ল্যানসিকে “গণতান্ত্রিক যোদ্ধা” হিসেবে সম্মান করে। 

লি ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে হংকং বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় ক্ল্যানসি ছোট-বড় নানা আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। সে সময় চার্চ বা অন্যান্য ধর্মীয় সংগঠনগুলোর রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কোন ভূমিকা ছিল না। কিন্তু ক্ল্যানসি তার লক্ষ্যে ছিলেন অবিচল।

লি বলেন, “সে সময় লড়াই করার বা সমাবেশ করার মতো সাহস খুব কম মানুষেরই ছিল। কারণ তা ছিল আদতে বেআইনী। ক্ল্যানসি সেই হাতে গোনা যাজকদের একজন যিনি ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে লড়াই করতে কখনো দ্বিধা করেন নি।”   

১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে ক্ল্যানসি হো সে ওয়াই এন্ড পার্টনার্স ফার্মে একজন শিক্ষানবীশ হিসেবে যোগ দেন এবং আইন বিষয়ক পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। 

তিনি বেশ কিছু ঐতিহাসিক আইনী ও রাজনৈতিক লড়াইয়ে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন। এর মধ্যে অন্যতম ২০১০ খ্রিস্টাব্দে ফিলিপাইন সরকারের নিকট হতে জিম্মি সংকটের ক্ষতিপূরণ আদায়, হংকংয়ের চেউং চাউ দ্বীপে বৈষম্যমূলক ক্ষুদ্র আবাসন নীতির বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় নিরীক্ষা এবং নির্যাতনের শিকার ধর্মীয় গোষ্ঠী ফালুন গং-এর পক্ষে আইনী লড়াই জয়।

হো সে ওয়াই এন্ড পার্টনার্সের প্রতিষ্ঠাতা আলবার্ট হো তিন দশকের বেশি সময় ধরে ক্ল্যানসিকে চেনেন ও জানেন। তিনি তাকে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর নায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

হো বলেন, “ক্ল্যানসি সব সময় সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার। তিনি তার মক্কেলদের কেস নিয়েই শুধু নয় তাদের সার্বিক ভালো-মন্দ নিয়েও মাথা ঘামান। তিনি তার অবসর সময় মানবাধিকার রক্ষার কাজে কাটান।”

তিনি আরো বলেন যে ক্ল্যানসি জোরালোভাবে সকলকে এই আপ্তবাক্য শোনান যে একজন মানুষও যদি অবিচারের শিকার হয় তখন তা সমাজের সবার জন্য লজ্জার কারণ।

ক্ল্যানসির কথা উল্লেখ করে হো বলেন, “যখন একজন মানুষের অধিকার খর্ব হয়, তখন সেটাকে সমাজের সকলের অধিকারের উপর আঘাত হিসেবে গন্য করতে হবে। সমাজ হচ্ছে মানব দেহের মতো। যখন দেহের কোন অঙ্গ আক্রান্ত হয়, সে বেদনা গোটা দেহ অনুভব করে।”

হংকংয়ের ক্রমশ ক্ষীয়মান গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা ক্ল্যানসিকে বিচলিত করে তোলে বটে, কিন্তু প্রিয় হংকংবাসীকে অনুপ্রেরণা যোগাতে তার কোন কুন্ঠা নেই। 

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের সাথে এক সাক্ষাৎকারে ক্ল্যানসি বলেন, “সাধু জনের লেখা প্রৈরিতিক পত্রে খুব সুন্দর একটি কথা রয়েছে: ‘ভালোবাসা যেখানে উৎকৃষ্ট, সেখানে ভয়ের কোন স্থান নেই.’ যদিও জাতীয় নিরাপত্তা আইন আমাদের দমিয়ে রাখতে চায়, কিন্তু তবুও আমাদের হংকংয়ের গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।”

বয়সের ভারে ন্যুজ্য কিন্তু তবু ক্ল্যানসি মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে এবং মানুষকে আশা ও সাহস যোগাতে আরো অনেকদিন কাজ করে যেতে চান। 

“আমি বিশ্বাস করি হংকং তার মানবাধিকার ও গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। যখন সর্বত্র নিকশ কালো অন্ধকার, তখনো যখন কেউ একবিন্দু আলোর রেখা দেখতে পায়, অন্যেরাও তখন সে আলো দেখতে সক্ষম হয়, এবং তখন ক্রমশ ভয় কেটে যেতে শুরু করে।”

-----০-----

মূল রচনা: Hong Kong's democracy champion won't give up the fight

প্রকাশকাল: ১লা ফেব্রুয়ারি, ২০২১

প্রকাশনা: ইউনিয়ন অব ক্যাথলিক এশিয়ান নিউজ (Union of Catholic Asian News)

মূল লেখার লিংক

 








       


No comments:

Post a Comment

দক্ষিণ এশিয়ায় ভোটের রাজনীতি এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়

Bangladeshi Christians who account for less than half percent of some 165 million inhabitants in the country pray during an Easter Mass in D...