Jan 18, 2018

জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ

Photo: Stephan Uttom/ucanews.com

বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর ফলে সৃষ্ট সমস্যাবলী অন্যতম প্রধান আলোচিত বিষয় মূলত মানবসৃষ্ট কারণে উদ্ভুত এই সর্বনাশা পরিবর্তনের হেতু বাংলাদেশ ও বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেশ ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখিন। সাম্প্রতিক বন্যা, তীব্র শীত সবই এ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘটছে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মত। তারা আরও একটি আশংকাজনক তথ্য দিয়েছেন যে, আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে গ্রীন হাউজ গ্যাসের মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠ ৮৮-৮৯ সে.মি বৃদ্ধি পাবে। ফলে মালদ্বীপের মত ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় ২০টি জেলা ডুবে যাবে, প্রায় ২ কোটি মানুয বাস্তুহারা হয়ে পড়বে।


জলবায়ু পরিবর্তন ও এর উৎপত্তি : জলবায়ু পরিবর্তনের সূচনা উনবিংশ শতকের মধ্যভাগে, ইউরোপ ও পরবতীর্তে বিশ্বজুড়ে শিল্প বিপ্লবের সময়কাল থেকে মূলত ধনী দেশগুলোই এর জন্যে দায়ী, কিন্তু দুঃখজনকভাবে এ পরিবর্তনের মাশুল দিতে হচ্ছে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোকে। তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বিশ্বের একক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট এককভাবে বায়ুম-লে ২২% কার্বন-ডাই-অক্সাইড (CO2) গ্যাস নির্গমনের জন্য দায়ী, অথচ দেশটি আজ অবধি (C02) গ্যাস নির্গমন হ্রাসকারী ‘কিয়োটো চুক্তি’ সাক্ষর করেনি।

এ চুক্তিতে ২০১২ সালের মধ্যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন ৩০% হ্রাস করার কথা বলা হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে কাজ করে এমন একটি এনজিও ‘জার্মানওয়াচ’ ২০০১ সালে ১৭০টি দেশ নিয়ে গবেষণা করে Global Climate Risk Index 2009 প্রস্তুত করে, যেখানে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ১০টি দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ।

নিম্নোক্ত তালিকায় সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ১০টি দেশের নাম ও সূচক মান তুলে ধরা হয়েছে :


বাংলাদেশ
উত্তর কোরিয়া
নিকারাগুয়া
ওমান
পাকিস্তান
বলিভিয়া
পাপুয়া নিউগিনি
ভিয়েতনাম
গ্রীস
১০ তাজিকিস্তান


২০০৬ সালের দি স্টার্ন রিভিউ অনুসারে “যদিও দরিদ্রতম উন্নয়নশীল দেশসমূহ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যৎসামান্যই দায়ী, কিন্তু এসব দেশই সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে মারাত্মকভাবে এর শিকার হবে। এসব দেশের নিম্ন আয় দিয়ে কোনভাবেই জলবায়ু পরিবর্তনের বিপরীতে বিকল্প ব্যবস্থার সংস্থান সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়গুলোর দায়িত্ব হচ্ছে অবিলম্বে এ পরিবর্তিত পরিস্থিতি উন্নয়ন পক্রিয়ায় ব্যাপক ভূমিকা রাখা। নতুবা বিশ্বজুড়ে অসংখ্য নিরীহ মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে।” বহু দশক ধরে ধনী দেশসমূহ প্রশ্নাতীতভাবেই মাত্রাতিরিক্ত কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমন করে এসেছে। এর অনিবার্য ফল হিসেবে এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকার আজ ভয়ানক হুমকির সম্মুখীন, নিয়তির পরিহাসে এসব মানুষের জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য খুবই অল্পই দায়ী এবং এর ঝুঁকি মোকাবেলার সহায়-সম্বল তাদের নেই বললেই চলে। তদুপরি ইতিমধ্যে বায়ুমন্ডলে নির্গত গ্রীনহাউস গ্যাসের কুফল ও এর বিলম্বিত নাশকতা থেকে এসব মনিুষের মুক্তিলাভের আপাতত কোন সম্ভাবনাই নেই। বর্তমান হারের বিশ্বজুড়ে কার্বন নির্গমনের পরিমাণ যদি হ্রাস করা না যায়, তবে এ ঝুঁকির পরিমাণ ক্রমাগত মারাত্মক রূপ ধারণ করবে। সর্বক্ষেত্রে ও সর্বাবস্থায় একথা নীতিগতভাবে স্বীকৃত যে, খেলার মাঠ থেকে শুরু করে বিচারালয় এবং বিশ্বজুড়ে কেউ যদি কারো প্রতি কোন অন্যায় বা ক্ষতি সাধন করে, তবে তার বিপরীতে ২ ধরনের ব্যধ্যবাধকতা রয়েছে। অন্যায় ও ক্ষতিকর কাজ বন্ধ করা এবং ঘটে যাওয়া ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়া। সুতরাং, একথা বলার অপেক্ষা রাখে না ধনীর দেশগুলোর পক্ষে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি বন্ধের ব্যবস্থা করা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান করা অত্যন্ত যুক্তিগ্রাহ্য ও ন্যায়সঙ্গত দাবি। আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম এর গবেষণা অনুসারে উন্নয়নশীল দেশসমূহে জলবায়ু পরির্বতেনর উন্নয়নের বিরূপ পরিস্থিতির ক্ষয়-ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কমপক্ষে ৫০ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রয়োজন, এর পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে যদি না অতি দ্রুত কার্বন নির্গমন বন্ধ করা না হয়। দরিদ্র দেশসমূহের জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্যের সঠিক চিত্র তুলে ধরার জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্যের সঠিক চিত্র তুলে ধরার জন্য জরুরী ভিত্তিতে কার্যক্রম জোরদার করা অত্যাবশ্যক। অক্সফাম এর নতুন Adaptation Financing Index (AFI)  অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে এ সাহায্যের সিংহভাগ (৯৫%) আসা উচিত। তবে  এ সহায়তা জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত ০.৭% হারে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তহবিলের অন্তর্ভুক্ত হবে ন।

কোপেনহেগেন চুক্তি : জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি সম্পর্কিত আলোচনা ও করণীয় নির্ধারণে জাতি সংঘের জলবায়ু কাউন্সিল বিশ্বের ১৯৩টি দেশের প্রধানদের বিশেষ সম্মেলন আয়োজন করে ২০০৯ এর ডিসেম্বর। ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত এ জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশসমূহের জন্যে যথার্থ আশা জাগানিয়া  হয় নি। এ সম্মেলনের প্রতিনিধিরা দীর্ঘ মেয়াদী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্যে যে সমঝোতা চুক্তি (ACCORD) সাক্ষর ইতোমধ্যে অপ্রতুল হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (UNFCCC) এর প্রধান ইভো ডি বোয়ের কোপেনহেগেন চুক্তির বিভিন্ন দুর্বলতার কথা নিসংকোচে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা এ সম্মেলন থেকে যা পেয়েছি যে ব্যাপাওে সৎভাবে স্বীকার করাই ভালো। যদিও এটি কোথাও বলা যেতে পারে, এ সম্মেলন থেকে বিশ্ব পেল তাৎক্ষণিক কার্যক্রম শুরু করার এক রাজনৈতিক ঘোষণাপত্র, যা বাস্তবভিত্তিক, পরিমাপযোগ্য ও যাচাই উপযোগী”।

কোপেনহেগেন চুক্তির সবচেয়ে দুর্বল দিক হচ্ছে ধনী দেশগুলোর ইচ্ছেমতো এতে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমনের হার শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসার বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে যুক্ত করা হয় নি। যা অন্যান্য দেশসমূহকে হতাশ করেছে। এ চুক্তিতে কার্বণ-ডাই-অক্সাইড হ্রাস বিষয়ক বাধ্যবাধকতা সংক্রান্ত কিয়োটো চুক্তি (যার মেয়াদ শেষ হবে ২০১২ সালে) নবায়ন কিংবা নতুন চুক্তি সম্পাদনের আইনী কোন বিষয় সংশ্লিষ্ট নেই।

এসব অসঙ্গতি বাদ দিলে কোপেনহেগেন সম্মেলন চুক্তি বেশ কিছু বিষয়ে সুনিদিষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। যেমন- প্রতি বছর বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিও হার  সেলসিয়াসের নিচে নামিয়ে আনা, ২০১৫ সালের মধ্যে চুক্তির উপর মূল্যায়ন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামিয়ে আনার উচ্চাভিলাষ। এ চুক্তির মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। কোপেনহেগেন গ্রীন ক্লাইমেট ফা-। যেখানে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ৩০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রদান এবং ২০২০ সালের মধ্যে এ তহবিলে মোট ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থ সংস্থানের উচ্চাকাংঙ্খী পরিকল্পনা। তবে এগুলোর পরও এ চুক্তি বিজ্ঞান সম্মত দৃষ্টিকোণ থেকে দুর্বল। আশার কথা হলো, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি ও দ্বিতীয় শীর্ষ কার্বন নির্গমক দেশ মানির্কন যুক্তরাষ্ট্রর বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তাঁর প্রশাসন জলবায়ু পরিবর্তন নীতিতে পূর্বসুরীদের তুলনায় বহুলাংশে উদার ও বাস্তবভিত্তিক সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে অনেকটাই ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছেন।

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন পরিস্থিতি : এদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক নমুনা সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া প্রলয়ংকরী দুটি ঘুণিঝড়।

সিডর: ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সংঘটিত ‘সিডর’। ২০-২৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি করে যা উপরকূলীয় ১৪টি জেলায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি সাধন করে। স্মরণকালের মধ্যে অন্যতম ভয়ংকর এই প্রাকৃতিক দুর্যেগের ছোঁবলে প্রায় ৫,০০০ জন মৃত্যু বরণ করে, ১৬ লক্ষ একর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়, ৮,০০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি ও অপরিমেয় গবাদি-পশু, বনরাজি ধ্বংস হয়ে যায়। ঘুণিঝড় সিডর সর্বমোট প্রায় ১৭০ কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস করেছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানান। এ দুর্যোগ ৬০,০০০ মানুষ গৃহীন ও বাস্তুহারা হয়ে পড়ে বলে জানা যায়। ঘুণিঝড় সিডর বিশ্বের সর্ববৃহৎ উপকূলীয় বন ও ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট । সুন্দরবনের উপর ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায় এবং গোটাা বনাঞ্চলের এক চতুর্থাংশ ধ্বংষ করে। গবেষকরা জানিয়েছেন, সিডরের ভয়াবহ ক্ষয়-ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সুন্দও বনের ৪০ বছরেরও বেশী সময় লাগবে। অনেকের মতে, সিডর ১৯৯১ সালের মহা ঘুণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের চেয়েও মারাাত্মক ছিলো, তবে তুলনামূলকভাবে প্রাণহানি কম ঘটেছে আধুনিক সতর্ক ব্যবস্থা ও উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের ফলে। ১.৭ বিলিয়ন ডলার ক্ষয়-ক্ষতির বিপরীতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা মোট ৯৫ মিলিয়ন ডলার সাহায্য ও ত্রাণ পাঠিয়েছে।

আইলা : ঘুণিঝড় সিডরের ভয়াবহতার রেশ না কাটতেই আরেকটি প্রাকৃতিক মহাদুর্যোগ উপকূলীয় অঞ্চলে হানা দেয়। ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’ নামক এই মহাদুর্যোগ ২৩ মে ২০০৯ খ্রীষ্টাব্দে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূল অঞ্চলে আঘাত হানে। আইলার ছোবলে ৩৩০ জনের প্রাণহানি ঘটে ও ৮,২০৮ জন নিখোঁজ হয়ে যায়। উপকূলীয় জেলাসমূহের প্রায় ৫শ’ জন মানুষ এ দুর্যোগের কারণে মারাত্মক আহত হয়। ঐসব জেলার প্রায় ২৬ লক্ষ মানুষ কোন না কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আইলার প্রকোপে মোট ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ মোট ৪০.৭ মিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা : সাম্প্রতিক ঘুণিঝড় পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সরকার, বিভিন্ন এনজিও ও সেনাবাহিনী ব্যাপকভিত্তিক ত্রাণ তৎপরতা চালায়। প্রায় ২২০ মিলিয়ন ডলার সম মূল্যের অর্থ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন উদ্যোগ প্রণীত হয়েছে। সরকার আরো অধিক পরিমাণ ত্রাণ সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে আবেদন করেছে সম্পূর্ণ পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করার লক্ষে। এতে ব্যাপক সাড়াও মিলেছে। শতকোটি ডলার সাহায্যের পাশাপাশি আমেরিকা, ভারত ও পাকিস্তানে নৌবহর, হেলিকপ্টার, সশাস্ত্র বাহিনী ও মেডিক্যাল টিম পাঠিয়ে সহায়তা দিয়েছে। দুর্যোগ পরবর্তী ত্রাণ ব্যবস্থা বেশ ভালো হলেও দুর্যোগ প্রবণতা হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমিয়ে আনার উদ্যোগ তেমন জোরালো নয়। প্রয়োজনীয় তহবিল ও যথার্থ পরিকল্পনার অভাবে লক্ষ লক্ষ উপকূল জেলাবাসী মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখীন।

জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলার প্রস্তুতি : ইতিমধ্যেই কুপ্রভাব ফেলতে শুরু করা জলবায়ু পরিবর্তন ও এর ফলে সৃষ্ট ভয়াবহ দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। বৃহৎ বরিশাল অঞ্চলে ১৩,৫০০ বর্গ কি.মি. এলাকায় উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ১৬ মিলিয়ন মানুষের জন্য ২৪০০ আশ্রয় কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে ১৯৯১ এর মহাদুর্যোগ পরবর্তী সময়ে। সম্প্রতি বিভিন্ন উপকূলীয় জেলার মধ্যে কক্সবাজার ৪০১, পটুয়াখালীতে ১৯৮, ফেনীতে ১০৬, বাগেরহাটে ৭, সাতক্ষীরায় ২৮, ভোলায় ১৫২, চট্টগ্রামে ৪৯৭ ও খুলনায় ৩৪টি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে। দুর্গম উপকূলীয় দ্বীপসমূহে দুর্যোগ প্রস্তুতির ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। নিঝুম দ্বীপ এর মাত্র ৪টি কেন্দ্র রয়েছে ২০ হাজার লোকের জন্য, চর নিজাম এ আছে ৪টি ৬ হাজার লোকের বিপরীতে এবং দুবলার চরের ৫০ হাজার লোকের বিপরীতে জন্য মাত্রাটি ৪টি কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন উপকূলীয় দ্বীপ যেমন- ঢাল চর, চর কুকরি মুকরি, চর মোতাহার, চর সুকুচিয়া ও চর জহিরুদ্ধীনে কোন আশ্রয় কেন্দ্রই নেই। বাংলাদেশ পরিবেশ মন্ত্রণালয়, বন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জলজ সম্পদ ব্যবস্থাপন প্রতিষ্ঠানসমূহকে তাৎক্ষণিক ও জরুরী ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে বসবাসকারী সকল মানুষের জন্য কার্যকর জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি মোকারেলার লক্ষে উদ্যোগ নেয়া জরুরী।

বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ ও দরিদ্র দেশ বাংলাদেশের মানুষ অনেকটা অযাচিতভাবেই জলবায়ু পরিবর্তন ও এর ফলে সৃষ্ট নানাবিধ দুর্যোগের শিক্ষা। আন্তর্জাতিক সমাজের যথার্থ সাড়া ও সহায়তা ব্যতীত বিপুল সংখ্যক লোকের ঝুঁকিপূর্ণ জীবনকে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দময় করা বাংলাদেশের একার পক্ষে কোন দিনই সম্ভব নয়। ধনী দেশসমূহ, যারা বায়ুম-ল দূষিত করে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী তাদেরকে সঠিক উপায়ে ও উপযুক্ত সময়ের মধ্যে এর প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতেই হবে। তা যদি আদ্যে সম্ভব হয় তবে মানবতার মা মহীয়সী মাদার তেরেজার অমোঘ বাণীর অনুকরণে বলা যাবে, “আসুন আমরা ঈশ্বরের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি।”


No comments:

Post a Comment

দক্ষিণ এশিয়ায় ভোটের রাজনীতি এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়

Bangladeshi Christians who account for less than half percent of some 165 million inhabitants in the country pray during an Easter Mass in D...