Jul 7, 2022

বিয়ের অনুষ্ঠানে আতিশয্য আর নয়

ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া দেশগুলোতে বিয়ে মানেই হলো সপ্তাহজুড়ে নানা অনুষ্ঠানের অপ্রয়োজনীয় আতিশয্য (Photo: Unsplash)

সময়কাল ২০২০। গোটা পৃথিবী করোনা মহামারীর প্রকোপে আক্রান্ত। বাংলাদেশের গাজীপুর জেলায় এক খ্রিস্টান এক যুগল বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে করোনা মহামারী সংক্রান্ত সরকারি বিধিমালা মেনে। গির্জায় বিয়ে আশীর্বাদ এবং বরের বাড়িতে সামাজিক অনুষ্ঠানে বর ও কনে পক্ষের মাত্র দশজন করে আত্মীয়-স্বজন অংশগ্রহণ করে। সন্ধ্যা নামার আগেই গোটা অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে। 

করোনা মহামারীকালে এমন অনেক সংক্ষিপ্ত ও অনাড়ম্বর বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাধারণ অবস্থায় এমন বিয়ে একপ্রকার অকল্পনীয় বটে।

ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া দেশগুলোতে বিয়ে মানেই হলো সপ্তাহজুড়ে নানা অনুষ্ঠানের অপ্রয়োজনীয় আতিশয্য। এসব অনাবশ্যক বাগাড়ম্বরের সাথে দেশীয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতির কোন মিল নেই বললেই চলে। 

এহেন জৌলুসপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতার উল্টোপিঠে আমরা দেখতে পাই দক্ষিণ এশিয়ার আর্থ-সামাজিক দূরাবস্থা যেখানে বিশ্বের মোট দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তিন ভাগের এক ভাগ বাস করে যাদের মাথাপিছু দৈনিক আয় দুই মার্কিন ডলারেরও নিচে।  

ভারতীয় ধনী ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিরা বিলাসবহুল বিয়ের অনুষ্ঠানকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যে বর্তমানে “বিগ ফ্যাট ইন্ডিয়ান ওয়েডিং” (Big Fat Indian Wedding) কথাটি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে

২০১৮ সালে ভারতের সবচেয়ে ধনী শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি তার মেয়ে ইশা আম্বানির বিয়েতে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে এ যাবত কালের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন। 

Jun 17, 2022

ক‌রোনা মহামারী ও আমাদের পরিবেশগত পাপসমুহ

ইনানী বিচ, কক্সবাজার, বাংলাদেশ (ছবিঃ এএফপি)

২০২০ সালের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়। সারা বিশ্ব তখন করোনা মহামারীর প্রবল প্রতাপে বিপর্যন্ত। ইতালীয় একজন প্রাণীবিদ একটি মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করেন যেখানে একটি জেলিফিশকে ভেনিস শহরের হ্রদের নির্মল জলে বিশাল অট্টালিকার প্রতিবিম্বের সাথে খেলা করতে দেখা যায়। করোনা মহামারীর কারণে শূন্য হয়ে পড়ার পূর্বে ভেনিস ছিল বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম।

সে বছরের মার্চ মাসের ৯ তারিখে কঠোর লকডাউন শুরু হলে ভেনিস শহর পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে। জেলিফিশের ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং অনেকে বলতে শুরু করে, “প্রকৃতি আবার ভেনিস শহরকে ফেরৎ নিয়ে নিচ্ছে।”

ভেনিস তার অসামান্য পরিবেশগত সৌন্দর্য, নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কারণে একাধারে ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্য এবং ইউরোপের অন্যতম রোমান্টিক নগরী হিসেবে নন্দিত। কিন্তু ভেনিসের ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য তার বোঝাস্বরুপ, কারণ প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৩০ লক্ষ পর্যটক এ নগরীতে ঘুরতে আসেন।        

সচরাচর দ্রুতগামী ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও প্রমোদতরীর অন্তহীন চলাচলে ভেনিসের খাল ও হ্রদের জল বিরতিহীনভাবে আন্দোলিত হতে থাকে। তাতে ভেনিস যেন অসহায়ভাবে হাঁপিয়ে ওঠে। পর্যটনের এ দূষণ ছাড়াও নিকটবর্তী পোর্তো মার্ঘেরা শিল্প এলাকা থেকে রাসায়নিক বর্জ্য নি:সরণ ভেনিসের পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরুপ। আর তাই করোনাকালে জনজীবনে স্থবিরতা ভেনিসের পরিবেশের জন্য শাপে বর হিসেবে আবির্ভূত হয়।

হাজারো মাইল দূরে বাংলাদেশের সাগরদুহিতা পর্যটন নগরী কক্সবাজারে করোনা মহামারীকালে এক প্রাকৃতিক পুনর্জাগর লক্ষ্য করা গেছে। এর সূচনা হয় ২০২০ সালের ২৬ মার্চে দেশব্যাপী লকডাউনের পর।

এপ্রিল মাসে বহু বছর পর বঙ্গোপসাগরে ডলফিনকে খেলা করতে দেখা গেছে। সাগরতটের প্রতিবেশের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সাগরলতা (Beach Morning Glory) আবার নতুন করে জেগে উঠতে শুরু করে। এ লতাগুল্মটি রেলরোড ভাইন নামেও পরিচিত। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের অন্তহীন চলাচল, নির্বিচার দূষণ এবং অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মাণের কারণে এ গুরুত্বপূর্ণ গুল্মটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে পরিবেশবিদগণ মনে করতেন।

যদিও কক্সবাজার ভেনিসের মতো বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র নয়, তবুও জনবহুল বাংলাদেশের এ নগরীতে প্রতি বছর সবচেয়ে বেশি পর্যটক বেড়াতে আসে। কিন্তু দু:খজনক হলো এ বিপুলসংখ্যক পর্যটকের সিংহভাগ পৃথিবীর এ দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের পরিবেশ নিয়ে মোটেও মাথা ঘামান না এবং যত্রতত্র ময়লা ও আবর্জনা ফেলে পরিবেশকে নোংরা করেন।

যদিও করোনা মহামারী গোটা বি‌শ্বের জন্য এক মহাবিপর্যয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল, কিন্তু ভেনিস ও কক্সবাজারে প্রকৃতির নবজাগরণ ছিল এ মহাসংকটের কতিপয় ইতিবাচক দিকের মধ্যে অন্যতম। 

May 19, 2022

৫০ বছরে বাংলাদেশ: স্বাধীনতা, অধিকার ও উন্নয়ন

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বিজয় দিবসের প্রাক্কালে ১৫ ডিসেম্বর প্রদীপ প্রজ্জলন (ছবিঃ এএফপি)

 সারা বিশ্বের ন্যায় করোনা মহামারীতে বাংলাদেশের জনজীবন বিপর্যস্ত হলেও ২০২১ সালটি ছিল জাতির জন্য একটি উৎসবমুখর ও তাৎপর্য্যপূর্ণ বছর। সে বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দেশজুড়ে পালিত ‘মুজিব বর্ষ’-র সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচী ও অনুষ্ঠানমালার বর্ণাঢ্য সমাপণী অনুষ্ঠিত হয়। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবের জেষ্ঠ্যা কন্যা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই বছরের শেষদিকে ডিসেম্বর মাসে জাতি পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছে।

শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গোটা বছর জুড়ে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যে সকল কর্মসূচী পালন করা হয়েছে তার চূড়ান্ত পর্যায়ের অনুষ্ঠানমালা মঞ্চস্থ হয়েছে ১৭-২৬ মার্চ। দেশের গণমান্য ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও ভারত, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, নেপাল ও ভুটানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রধান ও প্রতিনিধিগণ একগুচ্ছ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আয়োজনে শামিল হয়েছেন।

মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের জনগণের তরফ থেকে এরূপ উচ্চমার্গীয় শ্রদ্ধা ও সম্মান পাওয়ার শ্রেষ্ঠ দাবিদার। কারণ তার সুযোগ্য ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের গুণেই বাঙালি জাতির হাজার বছরের স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তব রূপ লাভ করেছে। আক্ষরিক অর্থেই মুজিব ছিলেন এক মহান ও দূরদর্শী নেতা, যিনি তার গোটা জীবন জনগণের সুখ ও দু:খে পাশে থেকে অতিবাহিত করেছেন এবং জনগণের অধিকার আদায়ের জন্যে বারংবার অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। এ কারণে তার প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের অধিকাংশ সময়ই জেলখানায় কাটাতে হয়েছে।

স্বাধীনতার পর চরমভাবে যুদ্ধবিদ্ধস্ত একটি রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে তাকে সর্বগ্রাসী দারিদ্র ও ক্ষুধাসহ এবং অসংখ্য সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে। কিন্তু জনগণ ও দেশের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল সর্বদা অতুলনীয় ও অতলস্পর্শী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে কুচক্রীদের ষড়যন্ত্রে সপরিবারে তার বর্বরোচিত হত্যাকান্ড বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কালো এবং মর্মান্তিক অধ্যায়।

যেভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন জাতিকে উজ্জীবিত করেছে, তেমনিভাবে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতেও দেশের জনগণ ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ পর্যন্ত এক সপ্তাহব্যাপী উদ্বেলিত ছিল। 

৫০ বছর আগের এই দিনে দেশ ও বিদেশে কোটি কোটি বাঙালি আনন্দ ও স্বস্তির অশ্রুজল বিসর্জন করেছিল। কেননা সেদিন বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর নিকট হানাদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নি:শর্ত আত্মসমর্পণের ফলে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়।

দক্ষিণ এশিয়ায় ভোটের রাজনীতি এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়

Bangladeshi Christians who account for less than half percent of some 165 million inhabitants in the country pray during an Easter Mass in D...